দীর্ঘ বর্ষার পর শরতের আগমনে যেন প্রকৃতির অবসাদ কেটে যায়। মাথার ওপর সুনীল আকাশ, তাতে গা ভাসিয়ে দেয় তুলোর মতো শুভ্র মেঘ। দিনের শুরুতেই সূর্য ছড়িয়ে দেয় স্বর্ণাভ আভা। দিনময় থাকে ঝরঝরে ভাব, শেষ রাত কাটে শীতলতায়। বৃষ্টির ছিটেফোঁটা যে একেবারেই নেই, তা বলা যায় না। মেঘরাজ্য়ে যখন খুনসুটি চলে, তখন একপশলা বৃষ্টিতেও ভেজে উঠোন, রাজপথ, ফসলের মাঠ, শিউলির বন।
সব ঋতুর মতোই শরতের প্রকৃতিতেও থাকে ভিন্ন কিছু উপকরণ। ভোরে শিউলিতলায় ভরে থাকা ফুল, আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের ভেলা, কাশফুলের বিস্তর সমুদ্র আর উঠোনে বুক পেতে রাখা চাঁদের আলো—সবটা মিলেই শরতের উপাখ্যান। আর উৎসব উপলক্ষে বা প্রতিটি ঋতুতেই বাঙালি নিজেদের পোশাকে নতুনত্ব আনায় উৎসাহী। এ কারণে শরৎ ঋতুতে আবহাওয়ার তাল বুঝে পোশাকের রং আর নকশায় থাকে স্নিগ্ধ রঙের খেলা। অন্যদিকে পূজার আগমনীতে পোশাকে থাকে বৈচিত্র্যের প্রয়াস।
শরতের দিনগুলোয় রোজ পরার জন্য পোশাকে নীল, সবুজ ও সাদা রঙের উপযোগিতার কথা বলেন ডিজাইনাররা। এ সময়ে এই রঙের সুতি কাপড় পরে আরাম পাওয়া যায়। এ ছাড়া দেখতেও ভালো লাগে।
ফৌজির স্বত্বাধিকারী, ফ্যাশন ডিজাইনার ফৌজিয়া আফরোজ জানান, এ সময়ের আবহাওয়া একটু মিশ্র প্রকৃতির—এর এক দিকে গরম, অন্যদিকে হঠাৎ বৃষ্টি। ফলে সব দিক চিন্তা করে পোশাক পরে যাতে আরাম পাওয়া যায়, পাশাপাশি চোখে দেখেও যাতে আরামবোধ হয়, সে কথা ভেবে শরতের জন্য তৈরি কাপড়ের রং বাছাই করা হয়। তা ছাড়া শরতের আকাশে নীলের আধিক্য় থাকে। ফলে নীলের বিভিন্ন শেডের ছোঁয়া থাকে পোশাকে। যেহেতু এ সময় বৃষ্টি হওয়ারও একটা ব্যাপার থাকে, তাই কিছু উজ্জ্বল রঙের পোশাকও দেখা যায় শরৎকালে।
মডেল: আনিকা, পোশাক: ফৌজি, মেকআপ: শোভন মেকওভার। ছবি: হাসান রাজাফৌজিয়া আফরোজ বলেন, ‘পোশাক-আশাকের ক্ষেত্রে ট্রেন্ড ধরারও একটা ব্যাপার থাকে। এ সময় সবুজের একটা টোনও খুব চলছে। তাই সবুজটাও থাকছে কাপড়ে। এককথায় নীলকে প্রাধান্য় দিয়ে এর সঙ্গে বিভিন্ন প্যাস্টেল শেডের পোশাক আমরা তৈরি করেছি।’
শাড়ি, আংগারখা, কুর্তি ছাড়াও পাঞ্জাবি ও একই নকশার ওপর ফ্যামিলি কম্বো করে নেওয়ার সুবিধা রয়েছে ফৌজিতে। এসব পোশাকের কাপড়ের ক্ষেত্রে বেশির ভাগই ব্যবহার করা হয়েছে সুতি ও অ্যান্ডি কটন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে লিনেনও ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান ফৌজিয়া আফরোজ। ১ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্য়ে এসব কাপড় পাওয়া যাবে।
নান্দীপাঠের স্বত্বাধিকারী তীর্থ নান্দী খায়ের সাধারণত খাদি শাড়িতে এমব্রয়ডারির কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘শরৎ এলে পূজার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। পূজার বিশেষ দিনগুলোর জন্য অনেকে এখন থেকেই শাড়ি অর্ডার করতে শুরু করেছেন। এ কারণে শারদীয় দুর্গাপূজার জন্যই মূলত প্রস্তুতি নিচ্ছি।’