বিদ্যমান সড়কের ওপর নির্মাণকাজের সময় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার দায়িত্ব প্রকল্প কর্তৃপক্ষের। এ জন্য খানাখন্দ মেরামত করতে হয় নিয়মিত। চলাচলকারী যানবাহন ও মানুষের নিরাপত্তা বিধান করাও প্রকল্পের কাজের অংশ। এ জন্য নির্মাণ এলাকা ঘিরে রাখার নিয়ম। কিন্তু রাজধানীর ব্যস্ততম বিমানবন্দর সড়কে প্রায় এক দশক ধরে চলা বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পে এর কিছুই মানা হয়নি।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের জয়দেবপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার পথে বিশেষ লেনের মাধ্যমে বাস চলাচলের জন্য বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলছে।
নির্মাণকাজ শুরুর পর এ পর্যন্ত বিআরটির উড়ালপথ তৈরির গার্ডার ধসে চারটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গতকাল সোমবার রাজধানীর উত্তরার জসিমউদ্দীন এলাকায় গার্ডার তোলার সময় তা একটি গাড়ির ওপর পড়ে যায়। এ ঘটনায় শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর আগে গত ১৫ জুলাই গাজীপুর শহরে গার্ডারের নিচে চাপা পড়ে একজন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হন। গত বছর ১৪ মার্চ বিমানবন্দর এলাকায় এবং আবদুল্লাহপুরে একই দিনে দুবার গার্ডারধসের ঘটনা ঘটে। এতে নির্মাণকাজে যুক্ত ছয়জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে তিনজন চীনের নাগরিক ছিলেন।
নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত সূত্র জানায়, গার্ডারগুলো ইংরেজি বর্ণ ‘আই’ আকৃতির। প্রতিটির ওজন ৪০–৪৫ টন। এসব গার্ডারের ওপর স্ল্যাব বসিয়ে বাস চলার পথ তৈরি হবে। বিপুল ওজনের এসব গার্ডার বসানোর কাজ চলছিল কোনো রকম নিরাপত্তাবেষ্টনী ছাড়াই। এ ছাড়া যেসব ক্রেন ব্যবহার করা হচ্ছিল, এগুলোর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
প্রকল্প–সংক্রান্ত নথি অনুসারে, ২০১২ সালে নেওয়া বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণকাজ চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে উড়ালপথ ও সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব পালন করছে তিনটি চীনা কোম্পানি। এগুলো হচ্ছে চায়না গেজহুবা গ্রুপ, জিয়াংশু প্রভিনশিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ এবং ওয়েহেই ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো–পারেটিভ। আর গাজীপুরে ডিপো নির্মাণের দায়িত্বে ছিল দেশীয় কোম্পানি সেল-ইউডিসি। এদের কাজ আগেই শেষ হয়েছে। তবে চীনের তিনটি কোম্পানির কাজ চলছে। এ প্রকল্পের কাজ ২০১৬ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়ই অর্থসংকটে ভোগে। এ ছাড়া তাদের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। এ জন্যই কাজের গতি কম, মান নিয়ে অসন্তোষ আছে।