দাম বাড়ার চাপ ও জুতার মাপে পা কাটা জীবন

প্রথম আলো মনোজ দে প্রকাশিত: ১৫ আগস্ট ২০২২, ০৯:৫০

একাদশ গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবী শ্যামল রায় (ছদ্মনাম)। মতিঝিল সরকারি কলোনিতে দুই কক্ষের একটি বাসায় থাকেন। ভাড়া বাবদ বেতনের ৪০ শতাংশ কেটে নেওয়া হয়। ছোট সংসারে স্বামী–স্ত্রী এবং আট বছরের একটা সন্তান। তিনি নিজে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী। ফলে নিয়মিত তাঁকে ওষুধের পেছনে ব্যয় করতে হয়। গত কয়েক মাসের ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতিতে (সরকারি হিসাবে কয়েক মাসের মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের একটু ওপরে। তবে কোনো কোনো গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের দাবি, মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে) প্রতি মাসেই সাংসারিক খরচের একেকটা খাত কেটে ফেলতে হচ্ছে।


শ্যামল বলছিলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসেও বাসার সবার জন্য দিনে একটা করে ডিম বরাদ্দ ছিল। গত দুই মাসে শুধু বাচ্চাটাকে দিনে একটা করে ডিম খেতে দেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার মধ্যরাতে (৫ আগস্ট) হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম একলাফে বেড়ে যাওয়ার ধাক্কায় বাজারে সেই ডিমের দামও একলাফে বেড়ে গেছে। ছয় মাস আগেও যে ডিম ৯০ টাকা ডজন কিনতেন এখন সেটা ১৫০ টাকা। আবার চাল, ডাল, তেল, সাবান, শাকসবজি, মুরগি, মাছ, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম গত কয়েক মাসে বাড়তে বাড়তে এক জায়গায় এসে একটু কেবল যখন স্থির হয়েছিল, সে সময়ে জ্বালানি তেলের ধাক্কায় সব হিসাব–নিকাশ তছনছ হয়ে গেছে। আগে মতিঝিল কলোনি থেকে অফিসে যাতায়াত করতেন রিকশায়। গত কয়েক মাসে শুধু অফিস থেকে ফেরার সময় রিকশায় চড়েছিলেন। এবারের ধাক্কার পর এখন আসা–যাওয়া দুটোই চলছে হেঁটে। বলছিলেন, কেবল তো মাসের অর্ধেকটা দিন পেরুল। আরও কয়েক দিন গেলে সংসার খরচের টানাটানিটা হাড়ে হাড়ে টের পাব।


শাহরিয়ার আলম। একটি বেসরকারি সংস্থার পদস্থ কর্মকর্তা। গত কয়েক মাসের টানা উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে তাঁর প্রতিষ্ঠান বছরের মাঝখানেই বাৎসরিক ইনক্রিমেন্টের অর্ধেকটা দিয়ে দিয়েছে। আয়–ব্যয়ের মাঝে ভারসাম্য রাখতে প্রাণান্ত চেষ্টা করেও কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না। ফলে বছরের মাঝখানে হঠাৎ পেয়ে যাওয়া ইনক্রিমেন্ট একটু স্বস্তি এনে দিয়েছিল। সেই স্বস্তির রেশ এক সপ্তাহও পার না হতেই জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সুনামির মুখে পড়তে হলো। অকটেনের যে দাম বেড়েছে, তাতে ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনে যে খরচ বাড়বে, তা তাঁর বর্ধিত বেতনের চেয়েও বেশি। জীবনযাত্রার অন্যান্য খরচও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। কোনো হিসাব–নিকাশেই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের পাটিগণিত মিলছে না।


৪০ বছর বয়সী আবদুর রহমান ১৫ বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালান। বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরে। স্ত্রী, আট ও ছয় বছর বয়সী দুই সন্তান গ্রামের বাড়িতে থাকে। তিনি ঢাকার রায়েরবাজারে একটি রিকশার গ্যারেজে আরও ১০ জন রিকশাচালকের সঙ্গে থাকেন। গত বছরের নভেম্বরে আগের দফায় জ্বালানি তেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ার আগপর্যন্ত ঢাকায় ১৫ দিন রিকশা চালিয়ে ১৫ দিন গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে গিয়ে কাটাতেন। এভাবেই চলে আসছিল তাঁর জীবন। নভেম্বরে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর ঢাকা–গাইবান্ধার বাসভাড়াসহ জীবনযাত্রার ব্যয় সব ক্ষেত্রেই বেড়ে যায়। ফলে ১৫ দিন ঢাকায় আর ১৫ দিন বাড়িতে থাকার সেই রুটিন ভেঙে ফেলতে বাধ্য হন। এক মাস পরপর বাড়ি গিয়ে সাত দিন থেকে আবার ঢাকায় ফিরতে হচ্ছিল তাঁকে। এবারের ধাক্কায় সেটা কত দিন পরপর হবে, তা তিনি বলতে পারছেন না। বলছিলেন, ‘রিকশা চালানো অনেক মেহনতের। একটানা চালাইলে শরীর ভাইঙ্গা যায়। কিন্তু কি করুম, উপায় তো নাই। যেমনে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, সংসার চালামু কেমনে। প্যাসেঞ্জারের কাছে বাড়তি ভাড়া চাইলে খ্যাচখ্যাচ করে। তারাও দিবে কোত্থিকা। তাদের কি আয় বাড়ছে?’


বিশ্বজুড়ে এখন সবচেয়ে আলোচিত শব্দ মূল্যস্ফীতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা মহামারির চেয়েও বড় এক নীরব ঘাতক এই মূল্যস্ফীতি। সাধারণ এবং নির্দিষ্ট আয় ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য মূল্যস্ফীতি রীতিমতো জীবন–জীবিকার সংকট। আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধ, করোনা মহামারি, মহামারিপরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কর্মসূচি আর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা ও জ্বালানিযুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে কয়েক শ কোটি মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আমাদের দেশেও মূল্যস্ফীতি বিপুলসংখ্যক নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তের জীবনে মূর্তিমান সংকট হয়ে আবির্ভূত হয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us