পরিবহন খাতের নৈরাজ্য থামাবে কে?

বাংলা ট্রিবিউন প্রভাষ আমিন প্রকাশিত: ১১ আগস্ট ২০২২, ১৯:৫৩

জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির পর চারদিকে হাহাকার তৈরি হয়েছে। এরইমধ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জনজীবনে। প্রথম ধাক্কাটা লাগবে পরিবহন খাতে- এটা প্রত্যাশিতই ছিল। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর আগে জ্বালানি মন্ত্রণালয় বাস ভাড়া সম্ভাব্য কত বাড়তে পারে, তার একটা হিসাব দিয়েছিল। তাতে মহানগরে ১৩ ভাগ এবং দূরপাল্লায় ১৬ ভাগ ব্যয় বাড়বে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভাড়া বেড়েছে যথাক্রমে ১৬ ও ২২ শতাংশ। বাস মালিকরা দাবি করেছিল ৭০ শতাংশ। তাদের দাবির তুলনায় ভাড়া কমই বেড়েছে বলতে হবে। যদিও তা জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের হিসাবের চেয়ে বেশি। তেলের দাম বাড়লেই মালিকরা নানান আজগুবি খরচের হিসাব নিয়ে আসেন। টায়ার-টিউব, রক্ষণাবেক্ষণের বিশাল খরচের বহর দেখিয়ে বাস ভাড়া বাড়িয়ে নিতে চান মালিকরা। তারাও জানেন পুরোটা পাবেন না, তারপরও কামান চাইলে বন্দুক মেলার কৌশলে তারা ৭০ ভাগ বৃদ্ধি চেয়ে সর্বোচ্চ ২২ ভাগ পেয়েছেন। যদিও শুধু তেলের দাম হিসাব করলে এটা বেশি। আবার সিএনজির দাম না বাড়লেও এই সুযোগে সিএনজিচালিত বাসের ভাড়াও বাড়বে। আবার যখন সিএনজির দাম বাড়ে, তখন ডিজেলচালিত বাসের ভাড়াও বাড়ে। এটা খুবই ইন্টারেস্টিং- ডিজেলের দাম বাড়লে মনে হয় সব বাস বুঝি ডিজেলেই চলে। আবার সিএনজির দাম বাড়লে মনে হয় সব বাস বুঝি সিএনজিতেই চলে। বাস মালিকরা সবসময় গাছেরটাও খান, তলারটাও কুড়ান।


সরকার যে ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেটা যদি কার্যকর হতো, তাও না হয় কথা ছিল। পরিবহন খাত হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মাফিয়া। তারা বারবার জনগণকে জিম্মি করে দাবি আদায় করে, সেটা ভাড়ার ক্ষেত্রেই হোক আর নতুন আইনের ক্ষেত্রেই হোক।


শুক্রবার মধ্যরাতে জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির খবর নিয়ে মানুষ ঘুমাতে গেলো। সকালে রাস্তায় বেরিয়ে দেখলো গাড়ি নেই। যাও অল্প কিছু গাড়ি আছে, তারাও ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছে। ডিজেলের দাম যেহেতু ৪২ ভাগ বেড়েছে, তারাও নিজ দায়িত্বে ভাড়া ৪২ ভাগ বাড়িয়ে দিলো। তেলের দাম বাড়লে ভাড়া বাড়বে, এটা সবাই জানেন; মালিকরাও জানেন। কিন্তু ভাড়া বাড়ানো পর্যন্তও তর সয়নি তাদের। শনিবার দিনভর রাজপথে রীতিমতো ডাকাতি হয়েছে। এগুলো আসলে মালিকরা ইচ্ছা করে করেন। নিজেদের শক্তিটা আগে থেকে দেখিয়ে রাখেন, যাতে ভাড়া বাড়ানোর আলোচনার টেবিলে তারা বাড়তি সুবিধা পান। সমস্যা হলো, সরকার যে ভাড়া বাড়িয়েছে, তা কি পুরোপুরি কার্যকর হয়েছে? বিআরটিএ মোবাইল কোর্ট বসিয়ে লোক দেখানো কিছু অভিযান চালিয়েছে বটে, কিন্তু বাস ভাড়ার নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। সমস্যা হলো, সরকার যে ভাড়া  বাড়িয়েছে, অনেক রুটে আগেই তারচেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছিল। সরকারি নির্দেশ মানতে হলে তাদের ভাড়া কমাতে হবে। সরকার যাই নির্ধারণ করুক, বাস মালিকরা ভাড়া আদায় করবেন নিজেদের ইচ্ছামতো। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর থেকে প্রতিদিন যাত্রীদের সাথে পরিবহন শ্রমিকদের বচসা হচ্ছে, কোথাও কোথাও মারামারিও হচ্ছে। তবে আমার ধারণা, এই অস্থিরতা থাকবে না। একটা স্থিতিশীলতা আসবে। কীভাবে আসবে? আপনাদের কি ধারণা বাস মালিকরা জনগণের দাবির মুখে সরকার-নির্ধারিত ভাড়া আদায় করবে। তেমন আশা যদি কেউ করে থাকেন, আপনাদের আশার গুড়ে কঙ্কর পড়বে। অসংগঠিত মানুষের ক্ষোভ দুয়েকদিন পর প্রশমিত হয়ে যাবে। আরও সব অন্যায়ের মতো এটাও তারা মুখ বুজে সয়ে যাবেন। সুসংগঠিত পরিবহন মাফিয়াদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ কখনোই পারেনি, পারবেও না। না পারার মূল কারণ, পরিবহন খাত যারা নিয়ন্ত্রণ করেন, তারা সবাই সরকারি দলের বিশাল বিশাল নেতা। শাজাহান খান যখন মন্ত্রী ছিলেন, তখন তার সরকারি বাসায় বসে পরিবহন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং সেখান থেকে ফোনে সবাইকে জানানো হয়েছে। এই যদি হয় অবস্থা, আপনি কখনও তাদের সাথে পারবেন না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

বাসভাড়া কিলোমিটারে ৫ পয়সা কমলো

ডেইলি স্টার | বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)
২ বছর, ২ মাস আগে

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us