প্রায় ২৫ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র কেন এভাবে হাউস স্পিকারের মতো এত উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে চীনের অত্যন্ত কঠোর হুঁশিয়ারির পরও তাইওয়ান সফর করতে দিল, তা একটি গুরুতর প্রশ্ন। ন্যান্সি পেলোসি পূর্বঘোষণামতোই তাইওয়ান সফর শেষ করেছেন। তাঁর সফরের ফলে দক্ষিণ চীন সাগরের আশপাশে চীন যে শক্তির মহড়া দিয়েছে, তা ১৯৯৫-এর পর সেখানকার সংকটকে জটিল করে তুলেছে।
চীন শক্তির মহড়া হিসেবে জাপান সাগরের কাছাকাছি এবং তাইওয়ানের পূর্ব দিকে ডং ফেং ক্লাশ ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুড়ে প্রকারান্তরে তাইওয়ানকে একধরনের সতর্কবার্তা দিয়েছে। অবশ্য চীন মিসাইল ছোড়াকে মহড়ার অংশ বলে বক্তব্য দিয়েছে। সংক্ষেপে চীন তার ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া তাইওয়ানকে একপ্রকার সামরিক হুমকির মুখে রেখেছে।
তাইওয়ান চীনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ—এ দাবি চীন কখনোই ছাড়েনি। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ চীনের ‘এক চীন নীতির’ সমর্থক। বাংলাদেশও চীনের এ দাবির পক্ষে। খোদ যুক্তরাষ্ট্রও ১৯৭২ সালে হেনরি কিসিঞ্জারের উদ্যোগে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ঐতিহাসিক চীন সফর করেন। ওই সফরের সময়ে দুই পক্ষ সাংহাইয়ে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে। সেখানে এক চীন নীতি উল্লেখ করে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ান ইস্যুর শান্তিপূর্ণ মীমাংসা চায়। ওই সময় শীতল যুদ্ধ চলছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সীমান্ত বিবাদে জড়িয়েছিল চীন। সম্পর্কের তিক্ততার সুযোগ নিয়ে চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে রাখতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিকভাবে তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও বাণিজ্যের নামে তাইপেতে বিশাল দপ্তর করেছে, সেটাই তাইওয়ানের দূতাবাসের কাজ করছে।
১৯৫৪ সালে কোরিয়ান যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের আইজেনহাওয়ার প্রশাসন তাইওয়ানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করে, যার আওতায় যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে সামরিক সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর করে। ১৯৭২ সালের ঘোষণাপত্র সত্ত্বেও ওই চুক্তি বাতিল হয়নি। এর মানে হচ্ছে চীন বলপূর্বক তাইওয়ানকে দখল করতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তি কার্যকর করবে।
ইতিমধ্যে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ইউক্রেন যুদ্ধ এবং হালের তাইওয়ান উত্তেজনা ঘিরে শীতল হতে শুরু করেছে। অতীতে তাইওয়ান প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের উত্তপ্ত সম্পর্কের জেরে ওই অঞ্চলে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। মনে রাখতে হবে, ১৯৫৪, ১৯৫৮ ও ১৯৯০ সালের চীন এবং ২০২২ সালের চীনের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত। চীন বর্তমানে শুধু অর্থনৈতিক শক্তিই নয়, সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এ অঞ্চলে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা রাখে। যদিও চীন এখনো যুক্তরাষ্ট্রের মতো দুই মহাসাগরে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার ক্ষমতা অর্জন করেনি।