বাজারে জিনিসের দামের সঙ্গে এমনিতেই নিজেদের আয় মিলাতে সারাক্ষণ অঙ্ক করতে হচ্ছিল আমজনতাকে। গত শুক্রবার মধ্যরাতে এক লাফে জ্বালানি তেলের দাম ৫০ শতাংশের মতো বাড়ার পর অস্বস্তির সঙ্গে জীবনের অনিশ্চয়তা যুক্ত হলো। তাদের জীবনকে আরও বিপর্যস্ত করার ইঙ্গিত দিয়ে কোনোটাই বাদ গেলো না, ডিজেল, অকটেন আর পেট্রোলের দাম রেকর্ড ছুঁয়ে ফেললো।
প্রথম প্রভাবই এলো নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী পরিবহন খাত থেকে। চার বা দু’চাকার যানবাহনের মালিকদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ! গণপরিবহন সরকারকে চাপে ফেলে বাড়তি ভাড়া ন্যায্য করে নিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করছে তার চেয়ে বেশি। জ্বালানি তেলের দাম দৈনন্দিন জীবনে থাবা বসিয়েছে। প্রতিদিনের খাবারে সামান্য কিছু জোগাড় করা এখন কষ্টসাধ্য। কারণ, পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। আর সেই খরচের কড়ি তো গুনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকেই।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এবং সরকারের পক্ষ থেকে আরও অনেকে নানা তথ্য দিচ্ছেন দাম বাড়ার পক্ষে। অনেকে আমেরিকা, কানাডা, জার্মানি, ইংল্যান্ড কিংবা ইউরোপের দেশগুলোর দামের সঙ্গে বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের দামের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে মূল্যবৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করছেন। এগুলোতে হয়তো যুক্তি আছে। কিন্তু মানুষ মানছে না। মানুষ মানছে না, কারণ বিশ্ববাজারে এখন জ্বালানি তেলের দাম কমছে। উন্নত দেশে বাড়ছে, কিন্তু সেখানে কী পরিবহন নৈরাজ্য হয়? সেখানকার মানুষকে দিনশেষে পেট চালানোর দুশ্চিন্তা করতে হয়? সেখানকার সরকার যত প্রকার নাগরিক সুবিধা দেয় সেটা কি এ দেশে দেওয়া হয়?
তেলের এমন নজিরবিহীন দৌড়ে কার্যত হতবাক মানুষ। প্রশ্ন উঠছে, করোনার ধকল কাটিয়ে ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক অবস্থা পুনরুদ্ধারে সংগ্রামরত অবস্থায় এই অভিঘাত মানুষের জন্য কি আরও এক আঘাত না? সব জিনিস ও সেবার দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতিকে করবে নিয়ন্ত্রণহীন। সে ক্ষেত্রে এখনই শুল্ক কমানোর পদক্ষেপ করে দামে রাশ না-টানলে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়াটাই অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে।
কোনও কিছু হঠাৎ করে করলে এবং এত বেশি চাপ দিলে মানুষের প্রস্তুতির সময় থাকে না। গত শুক্রবার জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে মানুষ প্রস্তুতির সময়ও পায়নি। মানুষকে এমন অবজ্ঞা কোনও শাসন প্রণালি হতে পারে না। মানুষকে সময় দিলে মানুষ খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। সরকার যখন দেশজুড়ে পরিকল্পিত লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলো মানুষ কিন্তু কষ্টটা করতে মেনে নিলো। কারণ, তারা বুঝতে পেরেছে পুরো পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে সমস্যাটা আমাদের কাছেও চলে এসেছে। কিন্তু এক রাতের মধ্যে ৫০ ভাগ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর দেশের মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এক লাফে এত না বাড়িয়ে ধাপে ধাপেও বাড়াতে পারতো সরকার।