অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম জ্বালানি বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা। দেশে আকস্মিকভাবে ডিজেল, পেট্রল, কেরোসিন ও অকটেনের বিপুল মূল্যবৃদ্ধি এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন।
এম শামসুল আলম: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো শুধু অযৌক্তিক নয়, বেআইনি হয়েছে। অন্যায় হয়েছে। ফৌজদারি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে তারা। আইন অনুযায়ী বিইআরসি ছাড়া এভাবে নির্বাহী আদেশে আমলারা জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে পারে না। এ কাজটি বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ক্ষমতাবহির্ভূতভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে জনগণের সর্বনাশ করার কোনো এখতিয়ার তাদের নেই। এটা জনগণের পকেট কাটার শামিল ও লুণ্ঠনমূলক।
আইনের বিষয়টি তো বললামদাম বাড়ানোর ক্ষমতাই নেই নির্বাহী আদেশে। এর পাশাপাশি আপনি যদি অন্য বিবেচনাগুলো দেখেন, তাহলে দেখবেন দাম বাড়ানোর দর্শনটা আসলে কী? সরকার জনগণের ওপর চাপ বাড়াল। অথচ সরকার তৈরি করে জনগণ। জনগণের পক্ষে সরকার তাদের স্বার্থ দেখে। কিন্তু এখানে সরকার জনগণের স্বার্থের কথা বিবেচনা করল না। জনগণের স্বার্থ, জনগণের বাঁচা-মরার বিষয়টি যে আছে সেটা বেমালুম চেপে গেল সরকার। এই বিবেচনার সঙ্গে রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যেকার সম্পর্কটি সাংঘর্ষিক পর্যায়ে পৌঁছে গেল। আর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম যে কমে গেছে সেসব বিষয়ে তো রয়েছেই। যদি বাংলাদেশে পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতেই হয়তার জন্য স্বচ্ছ একটা প্রক্রিয়া রয়েছে। সেই প্রক্রিয়ায় বাড়াতে হবে। যদি উন্মুক্ত গণশুনানি হতো, তাহলে আমরা বুঝতে পারতাম প্রতি লিটার তেলে কত টাকা কোথায় যাচ্ছে। এভাবে কাউকে কিচ্ছু না জানিয়ে, সবাইকে অন্ধকারে রেখে একটা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পক্ষে কি কোনো যুক্তি আছে?
বিইআরসি যে জনগণের স্বার্থ রক্ষা করে তা নয়। কিন্তু এটি একটি কাঠামোগত প্রক্রিয়া। এখানে এলে, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গেলে, বেশকিছু বিষয় নজরে আনা যায়। এর মধ্যে যেসব বিষয় উঠে আসে তা মানুষের কাছে তুলে ধরার সুযোগ থাকে। সেখানে কাউকে বাঁচাতে গেলেও তা প্রকাশ হয়। এসবের একটি দালিলিক গুরুত্ব আছে। সেখানে এভাবে সরাসরি একটা গণবিরোধী বড় অবস্থান নেওয়াটা কঠিন। কিন্তু আমি এটা বলছি না যে, বিইআরসি জনগণের স্বার্থের বিষয়ে খুব সচেতন। যদি বিইআরসিকে আরও শক্তিশালী করা যায়, তাদের ওপর যে আইনগত শক্তি দেওয়া আছে তা তারা প্রয়োগ করতে পারে, তাহলে প্রতিষ্ঠানটির সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। আর এ ধরনের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়ার মধ্যে বিইআরসির সক্ষমতাও বাড়ে।