জ্বালানিতে টান পড়ার পর জানা গেল, যা হারিয়েও হারায় না, তার একটার নাম ‘লোডশেডিং’ আরেকটার নাম ‘হারিকেন’। সম্ভবত গভীর রাতে লোডশেডিং রবীন্দ্রনাথকে হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেওয়ার পর তিনি বিপুল অভিমানে লিখেছিলেন, ‘যা হারিয়ে যায়, তা আগলে বসে রইব কত আর’।
কালের গলিত গর্ভে হারাতে বসা হারিকেন নামক এই স্মৃতি জাগানিয়া জিনিস জাতীয় জাদুঘরে ‘যাব-যাচ্ছি’ করছিল। কিন্তু মানীর মান রাখল রাশিয়া। শুধু হারিকেনের হারিয়ে যাওয়া ঠেকানোর জন্য হারিকেনবান্ধব ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়ে ডিজেল–পেট্রলের মার্কেটে আগুন ধরিয়ে দিলেন।
জ্বালানির অভাবে ইউরোপের পাশাপাশি এ দেশেও বিদ্যুতের প্রোডাকশন কমে গেছে। ম্যালা দিন পর আবার ‘যাওয়া-আসা ভিত্তিতে’ চব্বিশ ঘণ্টা বিদ্যুৎ চালু থাকায় খবরের কাগজে হেডিং হচ্ছে লোডশেডিং। বিস্মৃতির চিতাভস্ম থেকে ফিনিক্স পাখির মতো হারিকেনের পুনরুত্থান হয়েছে। হারিকেন মার্কেট গরম করে ফেলেছে। পাঁচতলা থেকে গাছতলা, মার্কেট থেকে রাজপথ, রাজপথ থেকে রাজনীতি—সবখানে হারিকেনের দাপাদাপি চলছে। এ ওর হাতে, সে তার হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিতে চাচ্ছে। কিন্তু কেউ নিজের হাতে তা ধরতে চাচ্ছে না।
তবে গত ২৯ জুলাই লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নেতা-কর্মীরা যে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিলেন, তাতে অনেকের হাতেই হারিকেন দেখা গেছে। সবগুলোই ছিল নতুন হারিকেন। সেসব হারিকেনের পলতে-সলতে কিছুই জ্বালানো ছিল না। সেই হারিকেনের গায়ে জংমিশ্রিত কেরোসিন লেগে না থাকায় বিক্ষোভকারীরা সেগুলোকে কোলে করে বসতে পেরেছিলেন। এই বিজলি বাতির একচ্ছত্র সাম্রাজ্যে একসঙ্গে এতগুলো নতুন হারিকেনের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ কী করে হলো, তা আমাদের বিস্মিত করেছে। এই জমানায় এত হারিকেন বানানোর অথবা আমদানির এমন দূরদর্শী চিন্তার পেছনে কোনো কোম্পানির কোনো দুরভিসন্ধি আছে কি না, হয়তো তার সুষ্ঠু তদন্ত চলছে। কারণ, এই হারিকেন এখন রাজনীতির হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেওয়ার অবস্থা তৈরি করেছে।
রাজপথে হাতে হারিকেন নিয়ে মিছিল করার আগে বিরোধী নেতারা হারিকেন হাতে ধরিয়ে দেওয়া–সংক্রান্ত যে জরুরি আলোচনা ও কলকাকলির সূত্রপাত করেছিলেন, তা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যেও বেশ ‘কলোচ্ছ্বাস’ তুলেছে। তার ঢেউ গণভবন পর্যন্ত পৌঁছেছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদের সবার হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেছেন।