রনিল বিক্রমাসিংহের অগ্নিপরীক্ষা

যুগান্তর এ কে এম শামসুদ্দিন প্রকাশিত: ০১ আগস্ট ২০২২, ০৯:০৩

প্রবল বিরোধিতা ও বিক্ষোভের মুখে শ্রীলংকায় ক্ষমতার পালাবদল হলো। মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্য ও জ্বালানির তীব্র সংকটের মুখে সৃষ্ট ব্যাপক জন-অন্তোষ ও গণবিক্ষোভে গোতাবায়া রাজাপাকসের দেশ ছেড়ে পালিয়ে ক্ষমতা ত্যাগের পর যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তা পূরণে ২০ জুলাই শ্রীলংকান পার্লামেন্টে সংসদ সদস্যরা ভোটের মাধ্যমে রনিল বিক্রমাসিংহেকে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে বেছে নিল! রনিল বিক্রমাসিংহে নির্বাচিত হলেও বিক্ষুব্ধ জনতা প্রেসিডেন্ট হিসাবে তাকে মেনে যে নেয়নি, বিভিন্ন গণমাধ্যমেই তা প্রকাশ পেয়েছে। তুমুল বিক্ষোভের পর মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগের পর গোতাবায়া জটিল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য রনিলকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে যখন বেছে নিয়েছিল, বিক্ষোভকারীরা তৎক্ষণাৎ গোতাবায়ার সঙ্গে রনিলেরও পদত্যাগ চেয়েছিল। দেশের অর্থনৈতিক ও খাদ্য সংকটের জন্য যে রাজাপাকসের পরিবারকে দায়ী করে নজিরবিহীন বিক্ষোভ হয়েছিল, রনিল ছিল তাদেরই ঘনিষ্ঠ একজন। রনিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীরা যত বিক্ষোভই দেখাক না কেন, শ্রীলংকার সংবিধান অনুযায়ী রনিল বিক্রমাসিংহেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়েছে। এখানে জনগণের করার কিছু ছিল না।


রনিল প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর জনতা পুনরায় বিক্ষোভ শুরু করতে পারে আশঙ্কা করে ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই সেনাবাহিনী নামিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের কাছেই গল ফেস ময়দানে যেসব তাঁবুতে বিক্ষোভকারী অবস্থান করতেন, সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও স্পেশাল টাস্কফোর্স রাতের আঁধারে অভিযান চালিয়ে আন্দোলনকারীদের সেখান থেকে বিতাড়িত করে জায়গাটি দখলে নেয়। নিরাপত্তা বাহিনীর এমন বর্বোরচিত অভিযানকে সে দেশের জনগণ ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। শ্রীলংকানরা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার ১২ ঘণ্টার মধ্যে রনিল এ হামলা চালালেন। তারা রনিলের এ অভিযানকে দমন-পীড়নের নতুন যুগে প্রবেশের সূচনা বলে অভিহিত করেছেন। রনিল বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় বিক্ষোভকারীদের বুক যেন ভেঙে গেছে। রাতের পর রাত জাগা বিক্ষোভকারীদের নিদ্রাহীন লাল চোখে যেন জমে উঠেছে রাজ্যের হতাশা। বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়ায় তাদের এ হতাশার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠেছে। ‘ভেস্তে গেছে আমাদের সব প্রচেষ্টা। আমরা হেরে গেছি, হেরে গেছে শ্রীলংকা’। বিক্ষোভকারীরা দুঃখ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলেছেন, রাজনীতিবিদদের কাছে ভালো কিছু আশা করেছিলাম। তারা জনগণের কথা একটুও ভাবেন না। যারা না খেয়ে অথবা আধাবেলা খেয়ে কষ্ট পাচ্ছেন, তাদের প্রতি রাজনীতিবিদদের কোনো অনুভূতি নেই। আমরা হতাশ, কিন্তু বিস্মিত নই। আমরা রাজাপাকসের শাসনের মানবসৃষ্ট সংকটে ভুগছি। যার জন্য রনিল বিক্রমাসিংহেও সমভাবে দায়ী। আমরা তাই রনিলের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখব, থামব না। এখন আমাদের আন্দোলনের নতুন কৌশল ঠিক করতে হবে।


রনিল বিক্রমাসিংহে রাজনীতিতে প্রবেশের আগে ১৯৭২ সালে অ্যাডভোকেট হিসাবে আইন ব্যবসা শুরু করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেই ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির টিকিটে বিয়াগামা নির্বাচনি এলাকা থেকে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ওই বছর তার চাচা জুলিয়াস রিচার্ড জয়াবর্ধন নতুন সরকার গঠন করলে তিনি পররাষ্ট্রবিষয়ক উপমন্ত্রী হন। পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময়ে তিনি একাধিক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি সংসদনেতা মনোনীত হন। ১৯৯৩ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসা তামিল টাইগার্সের হাতে বোমা বিস্ফোরণে নিহত হলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জি.বি. বিজেতুঙ্গাকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট করা হয়। এ সুযোগে রনিল বিক্রমাসিংহে প্রথমবারের মতো শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী হন। কথিত আছে, শহুরে মধ্যবিত্তের মধ্যে তার জনসমর্থন বেশি। তিনি বরাবর নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসাবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলেও দুর্নীতির অভিযোগ তার পিছু ছাড়েনি। যদিও এসব অভিযোগ থেকে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছেন। ভাগ্য তার এতই খারাপ যে, ছয় ছয়বার প্রধানমন্ত্রী হলেও একবারও তিনি মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। রাজনীতিতে তিনি শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সবার সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। বিশেষ করে, রাজাপাকসে পরিবার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়া সত্ত্বেও বছরের পর বছর তিনি তাদের সঙ্গে সখ্য বজায় রেখেছেন। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে রাজাপাকসে পরিবারকে দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে বিচারের মুখোমুখি হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে রনিল বিক্রমাসিংহের বিরুদ্ধে। তার আমলে রাজাপাকসে পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু হলেও পরে তা থেমে যায়; শেষ পর্যন্ত সেটি নিষ্ফলা তদন্তে রূপলাভ করে। কথিত আছে, তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর রনিলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সেসময় বন্ড কেলেঙ্কারিতে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ডুবতে বসলে মাহিন্দা রাজাপাকসে রনিলের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। রনিলের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার কখনো কণ্টকমুক্ত ছিল না। ২০২০ সালের নির্বাচনে রাজাপাকসেদের দল এসএলপিপির কাছে শোচনীয় পরাজয়ের পর ধরে নেওয়ার হয়েছিল যে, রনিল বিক্রমাসিংহের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বুঝি এখানেই শেষ। পরাজয়ের ফলে তার দলীয় সভাপতির পদ ছাড়ার জন্য দলের নেতারা দাবিও তুলেছিলেন। অথচ ভাগ্যের কী খেলা, তারই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ গোতাবায় নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য সেই রনিলকে ফিরিয়ে আনেন প্রধানমন্ত্রী পদে!

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ফেরার পর কী হবে গোতাবায়ার

প্রথম আলো | শ্রীলঙ্কা
২ বছর, ২ মাস আগে

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us