‘ঘটনার পর থেকে ট্রমার মধ্যে আছি। লাশ হয়ে যেতে পারতাম, ধর্ষণের শিকার হতে পারতাম। যেকোনো কিছুই ঘটতে পারত। আল্লাহর রহমতে আমি বেঁচে গেছি। বলে বুঝাইতে পারব না আসলে আমি কেমন বোধ করছি। বারবার চোখের সামনে অন্ধকার বাস ভাসতেছে। জাস্ট এতটুকুই বলব, আলহামদুলিল্লাহ, আই অ্যাম সেইফ।’
মুঠোফোনে প্রথম আলোকে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকার একজন নারী শিক্ষার্থী। তিনি গত রোববার রাত নয়টার দিকে রাজধানীতে বিকাশ পরিবহনের একটি বাস থেকে লাফ দিয়ে নেমে নিপীড়কের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করেছেন। ওই নারী শিক্ষার্থী তাঁর অভিজ্ঞতার কথা ফেসবুকে লিখেছেন। তাঁর ওই ফেসবুক পোস্টটি ভাইরাল হয়েছে। ঘটনায় জড়িত বাসচালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এই শিক্ষার্থী বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি একটি প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন কাজ করেন। কাজ শেষ করে আজিমপুরের বাসায় ফেরার জন্য তিনি রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে ধানমন্ডি থেকে বাসে উঠেছিলেন। বাসে যখন ওঠেন তখন অনেক যাত্রী ছিল। তিনি বাসের মাঝামাঝি একটি সিটে বসেছিলেন। সারা দিনের ধকল ও যানজটের জন্য বাসে চড়ে বাইরের আওয়াজ থেকে রেহাই পেতে তিনি কানে হেডফোন লাগিয়ে বেশ জোরে গান শোনেন। ঘটনার রাতেও তাই করছিলেন। আর খানিকটা ঝিমুনির মতোও চলে এসেছিল। তাই বাসের ভেতরে কী হচ্ছে, তা তিনি খেয়াল করেননি। বাসের সহকারী একবার ভাড়া নিতে এলে তিনি ভাড়া দিয়েছিলেন।
শিক্ষার্থী বলেন, ‘হুট করেই বুঝতে পারলাম আমার হাঁটুর ওপরে কারও হাতের স্পর্শ। সঙ্গে সঙ্গে তাকিয়ে দেখলাম, পুরো বাস খালি, আর আমার পাশে একজন বসা। বাসের সব লাইট বন্ধ। তাকানোর পর সেই লোক (হেলপার) আর একটু ওপরে হাত দেয়। জোরে ধাক্কা দিয়ে সেই লোককে সিট থেকে নিচে ফেলে দিই। দাঁড়াতে দাঁড়াতে মুঠোফোনটাকে ব্যাগে ঢোকাই। চিৎকার করতে থাকি বাস থামানোর জন্য। কিন্তু চালক বা হেলপার কোনো কথা বলছে না। আমি সামনের দিকে আগাতে গেলে হেলপার দুই হাত দিয়ে আমার মুখ ও হাত চেপে ধরে। পা ও কনুই দিয়ে হেলপারের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করতে থাকি। পা দিয়ে হেলপারের পায়ে জোরে আঘাত করি। হুট করে মনে হলো হেলপার যে হাত ধরে ছিল তা একটু আলগা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাসের জানালাগুলো কোন ফাঁকে বন্ধ করে দিয়েছে, খেয়াল করিনি। প্রথমে ভেবেছিলাম, দরজাতেও বোধ হয় সিটকিনি লাগানো। মনে মনেই চিন্তা করছি বাসের সিটকিনি যে কোথায় থাকে, তা–ও তো জানি না। তবে সামনের দিকে আসতে আসতে সড়কের গতিরোধকের জন্য বাসের গতিও খানিকটা কমাতে বাধ্য হয়েছিল চালক। যখন দেখলাম বাসের দরজায় সিটকিনি লাগানো নেই, কোনো কিছু চিন্তা না করে দরজা খুলে লাফ দিই। বাসে চড়ে অভ্যস্ত বলে তখন আর বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। নেমেই দৌড় দিলাম।’