পশ্চিমবঙ্গে আমার আদিবাসী বন্ধু কম নেই। ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দ্রৌপদী মুর্মুর নাম ঘোষণা করা মাত্র তাদের অধিকাংশের উল্লাস চোখে পড়েছিল। শেষ অবধি দ্রৌপদী জেতার পর, এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক পোস্টে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিপুল আনন্দ আপনি চাইলেও অস্বীকার করতে পারবেন না। মজা হচ্ছে, যারা আজ উল্লসিত হয়ে পোস্ট দিচ্ছেন, তাদের অনেকেই কিন্তু বিজেপি সমর্থক নন। বরং চেনাজানা অনেকেই আছেন যারা বিজেপির রাজনীতি পছন্দ করেন না। আবেগ চলে গেলে আদিবাসী সমাজ যে তিমিরে আছে তাই থাকবে তা নিয়ে অনেক আদিবাসী লোকজনেরও কোনো সন্দেহ নেই। আসলে ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে আদিবাসী জনজাতির লোকজন এমন অবহেলিত রয়ে গেছেন যে তাদের একজন দেশের এক নম্বর নাগরিক হচ্ছেন এটা ভেবেই আনন্দে মাতছেন। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় ধামসা মাদল বাজছে। নাচ হচ্ছে। আবির উড়ছে। এটা নিশ্চিত এক স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের বহিঃপ্রকাশ।
সে সব রাজনৈতিক বিশ্লেষণ চলতেই থাকবে। কিন্তু তার জন্য কিছু সময় লাগবে। ততদিন ভারতের প্রত্যন্ত আদিবাসী অধ্যুষিত ওড়িশা ঝাড়খ-ের সীমান্ত ময়ুরভঞ্জ জেলার রাইরঙ্গপরের উপুরবেড়া গ্রামের প্রথম মহিলা স্নাতক, অতি সাধারণ ঘরের দ্রৌপদী মুর্মুর রাষ্ট্রপতি হওয়ার কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ। ১৯৫৮ সালে জন্মেছেন দ্রৌপদী। ব্যক্তি বা সামাজিক ক্ষেত্রে তার লড়াই অবশ্যই কুর্ণিশযোগ্য। যে স্কুলে তিনি পড়তেন সেখানে মনিটর হতে পারত শুধু ছেলেরাই। দ্রৌপদী এই পুরুষতান্ত্রিক নিয়ম ভেঙে মনিটর হয়েছিলেন। বলা যেতে পারে এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই তার নেতৃত্বদানকারী ক্ষমতা সামনে এসেছিল। ব্যক্তিজীবনে তার একের পর এক পারিবারিক শোক এবং তা অতিক্রম করে যে অনুকরণযোগ্য লড়াই তা শুধু আদিবাসী জনজাতির মানুষজনকে নয়, প্রেরণা দেবে সমস্ত স্তরের মানুষকেই। পাঁচ বছরের মধ্যে দ্রৌপদী মুর্মু হারিয়েছেন স্বামী, দুই ছেলে, ভাই আর মা’কে। অনেকে ভেবেছিলেন শোকে পাথর দ্রৌপদী এই কঠিন সময় কোনোদিনই আর পার করতে পারবেন না। কিন্তু যাবতীয় শোক, সংকট কাটিয়ে তিনি আজ রাইসিনা হিলসের বাসিন্দা। দেশের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি।