জ্বালানি-সংকটের কারণে দেশব্যাপী এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা বলা হলেও রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অনেক স্থানে দিনে দুই ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। জেলা-উপজেলায় লোডশেডিং হচ্ছে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা। এর কারণ হিসেবে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড জানিয়েছে, তাদের চাহিদার তুলনায় তিন হাজার মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। অথচ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবিএল) ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার গতকাল যে হিসাব দিয়েছে, তাতে লোডশেডিং দেখানো হয়েছে ১ হাজার ৩৬৫ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ উৎপাদন, ঘাটতি ও লোডশেডিং নিয়ে পিজিসিবিএল যে তথ্য দিচ্ছে, তাতে রয়েছে নানা গরমিল। গতকাল সংস্থাটির অফিশিয়াল পেজে দেওয়া তথ্যমতে, সারা দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন দেখানো হয়েছে ১২ হাজার ৫৭০ মেগাওয়াট এবং লোডশেডিং ছিল ১ হাজার ৩৬৫ মেগাওয়াট। তবে পিজিসিবিএল থেকে বিভিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে দেওয়া তথ্য বলছে, গতকাল বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে ১০ হাজার ৮৪১ মেগাওয়াট। আর দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে ঘাটতি আছে ৩ হাজার ৩৫৯ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ ঘাটতি যে ৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি, সে তথ্য জানিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলোও। ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কাউসার আমির আলী লোডশেডিংয়ের ভয়াবহতা তুলে ধরে বলেন, ‘আমার এলাকায় এক ঘণ্টা লোডশেডিং করার পর গতকাল (বুধবার) বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ করা হয়েছে ৭৮০ মেগাওয়াট। সে কারণে রাতে কোনো না কোনো এলাকায় লোডশেডিং করতেই হবে। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে লোডশেডিংয়ের নিয়ম মানা কঠিন হয়ে পড়ছে।’
আরেক বিতরণ সংস্থা ডিপিডিসির এলাকায়ও দুই দিন ধরে দুই ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, এক ঘণ্টা লোডশেডিং করার পরও প্রতিদিন ১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দরকার হচ্ছে। কিন্তু গতকাল সরবরাহ করা হয়েছে ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের কাছাকাছি। আগের দিনের তুলনায় গতকাল বিদ্যুৎ সরবরাহ ১০০ মেগাওয়াট কম ছিল।
এ বিষয়ে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ প্রায় ১৪০ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট কম পাচ্ছি। এক ঘণ্টা লোডশেডিং করার পরও বিদ্যুতের ঘাটতি থাকছে, সে কারণে অতিরিক্ত লোডশেডিং করতে হচ্ছে।’