গত ৭ জুলাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনির্মিত আটতলা ভবনটি উদ্বোধন করার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে বিশ্বের মানুষকে শাস্তি দেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। তাই এখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরে আসা মনে হয় বাঞ্ছনীয়। আমি মনে করি সকলে সেটাই চাইবে। ’ বলার অপেক্ষা রাখে না যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা মানবাধিকার লঙ্ঘনেরই শামিল।কারণ এই সিদ্ধান্ত বিশ্বের জনগণকে তাদের মৌলিক অধিকার রক্ষা থেকে বঞ্চিত করছে। উন্নত দেশসহ গোটা বিশ্ব এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ রকম চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি যে ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে বাংলাদেশ তার প্রয়োজনীয়তা মেটাতে যে পণ্যগুলো আমদানি করে থাকে, সেসবের সহজলভ্যতা থাকছে না, আমদানি কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে খাদ্য উৎপাদনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে আমরা চেষ্টা করছি উৎপাদন বাড়ানোর। আমাদের খাদ্য যেন আমরা নিজেরা উৎপাদন করতে পারি সে ব্যবস্থাও আমরা করব। যদি অন্যকে সাহায্য করতে পারি সেটাও করব। কিন্তু উৎপাদন করতে গেলে আমাদের সার প্রয়োজন, ডিজেল প্রয়োজন, বিভিন্ন উপকরণ প্রয়োজন—সেটা আমরা পাচ্ছি না। ’ এ ছাড়া তিনি নিষেধাজ্ঞার কারণে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য পরিবহন যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তারও উল্লেখ করেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান, যাতে বিশ্বের মানুষ আর নিষেধাজ্ঞা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তিনি মনে করিয়ে দেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা এমন একসময়ে বাংলাদেশকে আঘাত করেছে, যখন দেশটি করোনা মহামারির বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে যাচ্ছিল।
আমরা জানি, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরপরই রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু করে। ৮ মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট রাশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের নির্দেশ দেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করতে শুরু করে। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা কি রাশিয়াকে ইউক্রেন আগ্রাসন থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়েছে বা হবে? তা না হলে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার সহযোগীরা এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল কেন? এই নিষেধাজ্ঞা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনছে না, বরং বিশ্বের মানুষ যখন কভিড-১৯-এর তীব্রতা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে, তখন তাদের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।