বিশ্ববাজারে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে জ্বালানি সাশ্রয়ে আজ মঙ্গলবার থেকে দেশজুড়ে এলাকাভিত্তিক এক থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া সপ্তাহে এক দিন বন্ধ থাকবে সারা দেশের সব পেট্রোল পাম্প। তবে কোন দিন বন্ধ থাকবে তা এখনো ঠিক করা হয়নি। পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তা নির্ধারণ করা হবে। সংকট না কাটা পর্যন্ত ডিজেলভিত্তিক সব বিদ্যুৎকেন্দ্রও বন্ধ থাকবে। এতে ২০ শতাংশ ডিজেল সাশ্রয় হবে বলে মনে করছে সরকার। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিসের সভা ভার্চুয়ালি করা হবে। অফিসের কর্মঘণ্টাও এক থেকে দুই ঘণ্টা এগিয়ে আনা হবে। গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিষয়ক সমন্বয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।
তবে এসব তৎপরতায় পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হবে না বলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) একাধিক প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো গত তিন বছর ধরে টানা বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে নতুন করে এসব কেন্দ্র বন্ধ করে জ¦ালানি সাশ্রয়ের সুযোগ নেই। আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সরবরাহ বাড়ানো না গেলে একমাত্র বৃষ্টিই সংকট দূর করতে পারে। কারণ সারা দেশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্রে (এসি) প্রতিদিন ৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়, বৃষ্টি হলে এসি চালানোর তেমন একটা দরকার পড়বে না। ফলে এই পরিমাণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। দেশে বর্তমানে পিক-আওয়ারে (সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত) গড়ে প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। মোট ২২ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার মধ্যে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলে পিক-আওয়ারের চাহিদার এই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে পিডিবি।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সারা দেশে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকলে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। এতে দিনে এক থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং হবে। তবে পিডিবির প্রকৌশলীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা জানান, ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গত তিন বছর ধরে টানা বন্ধ রাখা হয়েছে। কারণ ডিজেলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ গড়ে ২৪ টাকা ছিল, যা এখন বেড়ে ৩৭ টাকা হয়েছে। এ কেন্দ্রগুলো নতুন করে বন্ধ করার কিছু নেই। তাই ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে জ্বালানি সাশ্রয় করারও সুযোগ নেই।