বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের জাতীয় বেতন স্কেলের প্রাপ্য অংশ এমপিও তথা 'মান্থলি পে-অর্ডার' পেতে শিক্ষকদের কী ধরনের দুর্নীতির শিকার হতে হচ্ছে, সে বিষয়ে সমকালে জুলাইয়ের ৯ ও ১০ তারিখে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। টাকার অঙ্ক ও দুর্নীতির ধরনে দুর্নীতির এ চিত্র হয়তো আমাদের সবার কাছে নতুন নয়। দুর্নীতির কারণ হিসেবে শুধু দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির দুর্নীতিপ্রবণ আচরণ দায়ী নয়; সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি রোধে বিদ্যমান আইনি কাঠামোর যথাযথ প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহের স্বচ্ছতার অভাবকেও সমানভাবে দায়ী করা হয়। ফলে দুর্নীতির প্রক্রিয়া ও এর প্রভাব শুধু দুর্নীতিগ্রস্ত ও দুর্নীতির শিকার দু'জন ব্যক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। সে কারণে এমপিও পেতে শিক্ষকদের দুর্নীতির শিকারের প্রকৃত মূল্য কত, সেটা পর্যালোচনার দাবি রাখে।
অন্যান্য পেশা থেকে শিক্ষকতা অনেক কারণে আলাদা। এ বিষয়ে বিশদ আলোচনার সুযোগ এখানে নেই, তবে শিক্ষা ও শিক্ষকতার সঙ্গে কয়েকটি বিষয় জড়িত। শিক্ষা যেহেতু শুধু কয়েকটি যোগ্যতা অর্জনের হাতিয়ার নয়; বরং শিক্ষা সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিনির্মাণের যোগাযোগমাধ্যম। সে কারণে শিক্ষা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী- এ তিনটি পক্ষকে ভবিষ্যৎ সমাজ নির্মাণের মূল নিয়ামক শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলে শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত হন, তাঁদের পেশাগত জীবনে বেশ কিছু বিষয়ে প্রতিনিয়ত চর্চা করা জরুরি। যেমন শিক্ষককে 'আত্মসম্মানের চর্চা' বা 'নৈতিকতার চর্চা' করতে হয়।
কিন্তু এসব চর্চা শুধু তাঁর পেশাগত জীবনের উৎকর্ষ বজায় রাখা কিংবা তিনি যে কাজ করছেন, সেই কাজের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা শুধু তাঁর জন্য নয়; বরং এ 'আত্মসম্মান' বা 'নৈতিকতা'র বিষয় একটি সমাজের ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। শিক্ষক তাঁর পেশাগত জীবনে 'আত্মসম্মানবোধ' ও 'নৈতিকতা' চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মধ্যে সমাজে প্রচলিত অসম ও অন্যায্য ক্ষমতা কাঠামো ভাঙতে ব্রত তৈরি করেন। আমাদের সামাজিক ইতিহাসে শিক্ষক ঐতিহাসিকভাবে কাজটি যথেষ্ট ভালোভাবে করতে পেরেছিলেন, যার উদাহরণ আমরা বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক-গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দিকে তাকালে দেখতে পাই।