সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক ধরে ৩০-৩২ কিলোমিটার যাওয়ার পর জাতুয়া ব্রিজ। চারদিকে পানিতে থইথই করা ব্রিজের কাছে রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়েছে অনেক পরিবার। তাঁদের মধ্যে ছাতক উপজেলার দক্ষিণ কুরমা ইউনিয়নের মহৎপুর গ্রামের রোজিনা বেগমও আছেন। সোহান, সোহানা, সোহাগ নামের তিন শিশুসন্তান আর দিনমজুর স্বামী জাকারিয়া আমিনকে নিয়ে এক মাস ধরে রাস্তার পাশেই তাঁর সংসার। পানি সামান্য কমলেও বানের জলে বাড়িঘর ভেসে গেছে। বাধ্য হয়ে নিজের ও মায়ের পরিবারসহ রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়েছেন রোজিনা। আর চার দিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা। তবে এবারের ঈদ রাস্তায় কাটাতে হবে বলে আশঙ্কা করছে রোজিনার পরিবার।
গত ১৪ জুন থেকে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট এবং সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। দীর্ঘ ২০-২২ দিন ধরে দুই জেলার বিপুলসংখ্যক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। সরকারি হিসাবে, প্রাথমিকভাবে দুই জেলায় লক্ষাধিক বাড়িঘর আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য মিলেছে। গতকাল সিলেটে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে প্রাপ্ত অর্থ বন্যায় গৃহহীনদের বাড়িঘর মেরামতের জন্য বিতরণ করা হয়েছে। এজন্য বরাদ্দকৃত পাঁচ কোটি টাকা থেকে প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় কার্যত বিধ্বস্ত সুনামগঞ্জে বন্যাকবলিত পরিবারের মধ্যে আরও তিন দিন আগে বিতরণ শুরু হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা হয়েছে।
মে মাসের পর মাত্র পনেরো দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফা বন্যায় সিলেট বিভাগে অর্ধকোটি মানুষ প্লাবিত হন। সরকারের পক্ষে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়া শুরু হলেও অনেকে তালিকাভুক্ত হননি। জাতুয়া ব্রিজের পাশে স্বী-সন্তানসহ আশ্রয় নেওয়া জাকারিয়া বলেন, বন্যায় সব শেষ হয়ে গেছে। তাই রাস্তার পাশে ঘর বানিয়ে কোনো রকমে দিন পার করছি। পাশ থেকে স্ত্রী রোজিনা বলেন, রাস্তার পাশে বলে গাড়ি গেলেই সাহায্যের আশায় থাকি। কিন্তু এখানে গাড়ি থামে না। সবাই গাড়িভর্তি ত্রাণ নিয়ে দূরে চলে যায়।