সময়টা চরম লজ্জার

বাংলা ট্রিবিউন আবদুল মান্নান প্রকাশিত: ০৫ জুলাই ২০২২, ২০:৪৩

সপ্তাহ খানেক ধরে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিতে দেশের বাইরে। সবকিছু ঠিক থাকলে সামনের আগস্ট মাসে আমার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা জীবনের ঊনপঞ্চাশ বছর পূর্ণ করে পঞ্চাশে পা দেওয়ার কথা রয়েছে। চিন্তা করছিলাম যাপিত জীবন সম্পর্কে কিছু একটা লিখবো। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশে শিক্ষকদের যে অবস্থা দেখছি তারপর নিজের ওপর কেমন জানি একটা চরম ঘেন্না ধরে গেছে। কারণ, যাদের সম্পর্কে বলবো তারা সকলে আমার সহকর্মী, যাদের একসময় বলা হতো মানুষ গড়ার কারিগর।


১৯৭৩ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা জীবন যখন শুরু করি তখন বেতন ছিল ৪৫০ টাকা। উপাচার্য অধ্যাপক আবুল ফজল বঙ্গবন্ধুকে বলে শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা আর কর্মচারীদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করেছিলেন। দুই সপ্তাহ অন্তর দুই কেজি গম আর আধ কেজি চিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংখ্যা হাজার পাঁচেক হবে। শিক্ষক একশ’র মতো। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও শিক্ষকদের যে সম্মান করতো তা বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে অচিন্তনীয়। ১৯৯৬ সালে যখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যিনি তখন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আচার্য, যখন আমাকে উপাচার্যের দায়িত্ব দিলেন, তখন আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম। তখন ক্যাম্পাসে যে ক’জন সিনিয়র শিক্ষক ছিলেন তাঁদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সন্ধ্যার পর সালাম করে দোয়া নিয়ে এসেছি। পরদিন নতুন পদে যোগ দিলাম। এর ক’দিন পর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে এক সভা। তখন দেশে সর্বমোট উপাচার্যের সংখ্যা মোট ছয় জন। কমিশনের বর্তমান অফিসে গিয়ে দেখি আমার শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ হাবিবুল্লাহ সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছেন। তাঁকে দেখেই পা ছুঁয়ে সালাম করতে তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। এরপর তিনি তাঁর ক্লাসে সুযোগ পেলেই এই কথা ছাত্রদের বলতেন। বলতেন– ‘আমার ছাত্রদের নিয়ে গর্বিত’। তেমন কথা বলার সুযোগ শিক্ষকদের জন্য  দ্রুত সীমিত হয়ে আসছে। এরপর আমি আমার যে ক’জন স্কুলশিক্ষক তখনও বেঁচে ছিলেন তাঁদের দোয়া নিয়ে এসেছি।


উপরের ব্যক্তিগত কিছু কথা বলতে হলো গত কয়েক সপ্তাহে দেশে ঘটে যাওয়া কিছু মর্মান্তিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে। শুরুটা সম্ভবত হয়েছিল নারায়ণগঞ্জে যখন একজন তথাকথিত জনপ্রতিনিধি একজন স্কুল শিক্ষককে সকলের সামনে কান ধরে ওঠ-বস করালেন। এখনও ওই ঘটনার কথা মনে হলে মনটা অসম্ভব বিষিয়ে  ওঠে। তখন কবি কাজী কাদের নেওয়াজের বিখ্যাত কবিতা ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতাটির কথা মনে পড়ে যায়। কবি কাজী নেওয়াজ ১৯০৯ সালে বর্তমান ভারতের বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৮৩ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। জীবনে কবিতা লিখেছেন অনেক, তবে তাঁর উপদেশমূলক কবিতাগুলো এখনও তাঁর সেরা কবিতা বলে গণ্য হয়। যদিও অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় এসব কবিতার আবেদন বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রায় হারিয়ে গেছে। তাঁর ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতাটির প্রেক্ষাপট মোগল বাদশাহ আলমগীরকে কেন্দ্র করে । বাদশাহর ছেলেকে দিল্লির এক মৌলভী পড়াতেন। একদিন বাদশাহ দেখেন তাঁর পুত্র মৌলভীর পায়ে একটি পাত্র হতে পানি ঢালছে আর মৌলভী ওজু করছেন। বাদশাহ যে এই দৃশ্য দেখেছেন তা মৌলভীর চোখ এড়ায়নি। তিনি কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। বাদশাহ নামদার এই দৃশ্য দেখে কি না মনে করেন। তাঁর শাহজাদা একজন মৌলভীর পায়ে পানি ঢালছে। তারপর মনে মনে তিনি চিন্তা করেন ‘আমি ভয় করি  না’ক, যায় যাবে শির টুটি, শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার, দিল্লিপতি সে তো কোন ছার।’ পরদিন সকালে মৌলভীর ডাক পড়লো বাদশাহর দরবারে। বাদশাহ মৌলভীকে তাঁর খাস কামরায় ডেকে নিয়ে বলেন ‘শুনুন জনাব তবে, পুত্র আমার আপনার কাছে সৌজন্য কি কিছু শিখিয়াছে? বরং শিখেছে বেয়াদবি আর গুরুজনদের অবহেলা, নহিলে সেদিন দেখিলাম সকাল বেলা। ... সেদিন আমি প্রভাতে দেখিলাম আমি দাঁড়ায়ে তফাতে নিজ হাতে যবে চরণ আপনি করেন প্রক্ষালন, পুত্র আমার জল ঢালি শুধু ভিজাইছে ও চরণ। নিজ হাতখানি আপনার পায়ে বুলাইয়া সযতনে ধুয়ে দিল না’ক কেন সে চরণ, স্মরি ব্যথা মনে।’ মৌলভী দাঁড়িয়ে বাদশাহকে সম্মান জানিয়ে বলেন ‘আজ হতে চির উন্নত হলো শিক্ষাগুরুর শির, সত্যই তুমি মহান বাদশাহ আলমগীর’। সেটি এখন অনেকের জন্য হয়তো একটা কল্পকাহিনি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us