এ বছর বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে ইতোমধ্যে পরপর তিনবার বন্যা ও পাহাড়ি ঢল হয়ে গেল। অল্প সময়ের ব্যবধানে এত ঘন ঘন বন্যা মোকাবিলা করার জন্য সেখানকার মানুষ মোটেও প্রস্তুত ছিল না। বিশেষ করে তৃতীয়বারের বন্যার পানির প্রবল স্রোত ও আক্রোশ এত বেশি ছিল, তা দেখে অনেকে ভীষণ ভয় পেয়ে গেছে। জীবন বাঁচাতে ডুবে যাওয়া বসতবাড়ি ও সহায়-সম্বল ছেড়ে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে ভেলা, নৌকা, ট্রলার, দূরের কোনো উঁচু দালান, রাস্তার ধারে অথবা আশ্রয় শিবিরে।
অন্যান্যবার বন্যা হলে দু’তিন দিন পরে পানি নেমে যেত। তখন বন্যার্তরা নিজ নিজ বসতভিটায় ফিরে গিয়ে নতুনভাবে গুছিয়ে নিয়ে জীবন-জীবিকা শুরু করত। কিন্তু এবারের বন্যার তাণ্ডব, বিস্তার ও স্থায়িত্ব সম্পূর্ণ ভিন্ন থাকায় পানি নামতে থাকার গতি খুবই ধীর প্রকৃতির। বন্যা শুরু হওয়ার সাত-দশদিন পরও কোথাও কোথাও পানি সরে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়নি। গ্রামাঞ্চলে কারও কারও বসতবাড়ির ঘরের চালের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল প্রবল স্রোত। সবকিছু ভেঙেচুরে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে অনেকের। পানি নামার পর নিজেদের বাড়িঘরের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকে। প্রলয়ংকরী বন্যার পর এলাকায় ফিরে বিধ্বস্ত ও শূন্যভিটা দেখে অনেকে ডুকরে কেঁদে উঠছেন। সামনের দিনগুলোতে কী করবেন, কী খাবেন, সন্তানদের নিয়ে কীভাবে দিনাতিপাত করবেন-সেই চিন্তায় অধীর হয়ে উঠছেন তারা।
বন্যায় কী নষ্ট হয়নি তাদের? নষ্ট হয়ে যাওয়া বাস্তুভিটা ও সহায়-সম্বলের মধ্যে চারদিকে শুধু কষ্ট খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। সিলেটে ৮০ শতাংশ এলাকা এবং সুনামগঞ্জে ৯০ শতাংশ এলাকা ৭ থেকে ১০ দিন ধরে পানির নিচে ডুবে ছিল। এতে যে চরম ক্ষতি হয়েছে, সেটি মানুষ আগে মোটেও কল্পনা করেনি। বন্যার পর চারদিকে শুধু হাহাকার শব্দ যেন সেখানকার গৃহহারাদের কানে প্রতিধ্বনিত হয়ে পরিহাস করছে।