বাংলাদেশের মানুষের অনেক অর্জনের মধ্যে একটি হলো পদ্মা সেতু নির্মাণ। পদ্মা সেতুর কাহিনী এখন দেশ বিদেশের মানুষ জেনে গেছেন। পদ্মা সেতু উৎকর্ষ, প্রযুক্তির নিদর্শন। পাশ্চাত্য পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে যে অপমান করেছিল বাঙালি সে অপমানের উপযুক্ত জবাব দিয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া বাংলাদেশের বেশির ভাগ অর্জন হয়েছে শেখ হাসিনার আমলে।
জিয়া পরিবার ও এরশাদ পরিবারের নেতৃত্বে পাকিস্তানিয়ন প্রকল্প রোধ, বাংলাদেশের সীমানার স্থায়ীকরণ, সমুদ্র সীমা জয়, পার্বত্য শান্তি ও গঙ্গা চুক্তি, বঙ্গবন্ধু হত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধ বিচার- এ তালিকা আরো দীর্ঘ করা যায়। নাই বা করলাম। শেখ হাসিনাকে পছন্দ না করতে পারি কিন্তু এ কাজগুলি যে তিনি করেছেন তাতো অস্বীকার করার জো নেই। চ্যালেঞ্জ তিনি নিয়েছেন এবং জিতেছেন।
প্রশ্ন শেখ হাসিনার আমলে কেনো এসব পুলিশের বিচার হয় না, স্থানীয় নেতা যারা জড়িত তাদের দলে রাখা হয়? কোনো কৈফিয়ত চাওয়া হয় না। ভারতে মুসলমানরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হবে দেখে আমাদের এখানে হিন্দুরা তা হবে কেনো? শেখ হাসিনা তো তা বিশ্বাস করেন না। করলে প্রশাসনে এতোসব উচ্চপদেতো কোনো হিন্দু থাকতেন না? কিন্তু, ঐ যে, সমাজ আর তার নিয়ন্ত্রণে নেই। দেশের আর্থিক উন্নয়নে নজর দেওয়া হয়েছে, মানস জগত বদলানোর কাজে বিনিয়োগ শূন্য।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যখন দেশের জঙ্গিয়ান হচ্ছিল তখন হাসিনা রুখে দাঁড়িয়েছেন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে। ক্ষমতায় গিয়ে জঙ্গি দমন করেছেন। আমরা জানি, জঙ্গিরা দমিত হয়েছে কিন্তু তাদের আদর্শ দমিত হয়নি। আওয়ামী লীগেরও একটি আদর্শ আছে যার মূল কথা অসাম্প্রদায়িকতা। এই আদর্শ বিনষ্ট করার জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে এর বিরোধীরা। এর মধ্যে আছে জামায়াত-বিএনপি, আওয়ামী লীগের দক্ষিণাংশ, হেফাজত ইসলাম, কওমী মাদ্রাসা, বিভিন্ন পীরের দল। কিছুদিন আগে হেজাবিদের [হেফাজত+জামায়াত+বিএনপি] সঙ্গে সমঝোতা এদের আরো শক্তিশালী করেছে।
তত্ত্ব ছিল, এই সমঝোতা আওয়ামী লীগের ভোটের বাক্স ভরে দেবে। ভোটের বাক্স ভরেনি বরং তারা আরো উদ্ধত হয়ে ধমক দিচ্ছিল। শেখ হাসিনা এখন সেই তত্ত্ব থেকে খানিকটা সরে আসায় হেজাবিরা কিছুটা ক্ষুব্ধ ও ম্লান। ভোটের বাক্স যেমন ছিল তেমন আছে। বরং যারা ক্ষুব্ধ ছিল এ তত্ত্বে তারা ফিরে এসেছেন। কিন্তু আসলেই কি সব ঠিকঠাক আছে? হাসিনা বিরোধীরা কি চুপ করে গেছে? মোটেই না। আদর্শগত যুদ্ধে তারা আরো প্রভাব বিস্তার করছে। সেটি আওয়ামী লীগ নেতারা যারা সব পেয়েছির দেশে আছেন তারা অস্বীকার করতে পারেন। কিন্তু অন্যরা করবেন না।
শেখ হাসিনার সময় কেনো এমন হবে?
২৬ জুন জাহানারা ইমাম স্মৃতি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে নাট্যজন মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থান এবং আমাদের দায়’ প্রবন্ধে বিষয়টির একটি রূপরেখা প্রদান করেছেন। এ প্রবন্ধে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তা’হলো, শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন কিন্তু সমাজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। এ কথাটি গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, জয়বাংলা ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল। জয়বাংলা তিনি আবার রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। কিন্তু সমাজ তো জয়বাংলা বলে না। সমাজ যদি ছিনতাই হয়ে যায় তা’হলে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ সমীকরণে সাহায্য করে না। কয়েকটি উদাহরণ দিই।