এমন বন্যার কথা মনে করতে পারছেন না সিলেট অঞ্চলের কেউ। চলতি বন্যায় সরকারি হিসাব মতে সিলেট জেলার ৩০ লাখ আর সুনামগঞ্জ জেলার ২০ লাখ মানুষ কঠিন সময় পার করছেন।
এখন পর্যন্ত দেশের ১২ জেলার ৭০টি উপজেলা বন্যায় প্লাবিত। নতুন করে ছয়টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। তবে ত্রাণমন্ত্রী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (২১ জুন ২০২২) থেকে বন্যার পানি সার্বিকভাবে কমতে শুরু করবে। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করতে করতে রবিবার (১৯ জুন) সচিবালয়ে বন্যার বিদায় ঘণ্টার আগাম খবর ফাঁস করে দেন মন্ত্রী।
গত বৃহস্পতিবার থেকে বন্যার হালহকিকত ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছিল। তবে পরিস্থিতি যে এতটা খারাপ হবে সেটা বোধহয় কারও ‘আক্কেলে’ ধরা পড়েনি। কর্তারা মনে করেছিলেন কী আর হবে। বন্যা ব্যবস্থাপনায় আমাদের হাত-পা সবই পাকা। আমরা পৃথিবীর আদর্শ ‘রোল মডেল’; আলমারিতে-শোকেসে থরে থরে সাজানো আমাদের স্বীকৃতির নানা ট্রফি, নানা সনদ। আমাদের আত্মতুষ্টির ঢেঁকুরের শব্দে পালানোর পথ পাবে না বন্যা।
পানিবন্দি পরিস্থিতির শিকার আমার এক সাবেক ছাত্রী (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ছাত্রী, হালে আমলা) খুব কষ্ট থেকে লিখেছেন– ‘যদিও এমন পরিস্থিতির ইঙ্গিত ১০ দিন আগে থেকেই দিচ্ছিলো বিশ্বের বড় বড় আবহাওয়া সংস্থাগুলো। আমাদের আছে শুধু রোল মডেলের ফাঁকা বুলি! আছে এসি রুমে কফির মগ হাতে বসে প্যানেল ডিসকাশন কিংবা টকশোতে গলা ফাটানোর ভাঁওতাবাজি। আমাকে ‘রোল মডেল’এর মেডেলগুলো এনে দেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য পাওয়া বড় বড় পদকগুলো এনে দেন। বসে বসে পানিতে ভিজিয়ে খাই।’
সকল প্রযুক্তি আর স্বাচ্ছন্দ্য হাতের মুঠোয় থাকার পরে পানিবন্দি সেই সাবেক ছাত্রী ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় তার প্রিয়জনদের সাথে কোনও যোগাযোগ করতে পারেনি; সেই হতাশা থেকেই তিনি আরও লিখেছিলেন– ‘ … স্বামীর সাথে আমার যোগাযোগ নেই। প্রতিটা মুহূর্ত যে কী কঠিন তা শুধু ভুক্তভোগী পরিবারই ভালো জানে! প্রশাসন থেকে যেসব নাম্বার দেওয়া হয়েছে তার একটা নাম্বারেও কল ঢুকে না। মাত্র দুইটা জেলার দুর্যোগ পরিস্থিতি সামাল দিতেই আমাদের এই অবস্থা! পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনও সমন্বয় নাই, আগাম কোনও প্রস্তুতি নাই।’