পত্রিকার সংবাদ অনুযায়ী মাননীয় অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন যে যাদের ঢাকা শহরে জমি বা ফ্ল্যাট আছে তারা সবাই কালো টাকার মালিক। কালো টাকা বলতে তিনি আয়কর রিটার্ন-এর "অপ্রদর্শিত" আয়কে বুঝিয়েছেন এবং বিশেষ করে গুলশান-বনানীর মত অভিজাত এলাকার উদাহরণ দিয়েছেন। আশ্চর্যের বিষয় যে এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্তব্য নিয়ে কোনো আলোচনা চোখে পড়েনি। ডেভলপার কোম্পানিগুলোর সঙ্ঘঠন (রিহ্যাব) বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় ফ্ল্যাট বিক্রয়ের রেজিস্ট্রেশন ফী কমানোর দাবী করলেও এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি।
দেশে ব্যাপক হারে কর ফাঁকির প্রবণতা জানা কথা। কিন্তু অর্থমন্ত্রী জমি বা ফ্ল্যাট কেনা-বেচার বিদ্যমান আইনী প্রক্রিয়ায় একটি অসঙ্গতি উল্লেখ করে উক্ত মন্তব্যটি করেছেন। সরকার বিভিন্ন অঞ্চলের জমি বা ফ্ল্যাট হস্তান্তরের রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটা দাম বেঁধে দিয়েছেন (জমি বা ফ্ল্যাটের আয়তন অনুযায়ী)। অর্থমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন যে গুলশান এলাকার জন্য এই বেঁধে দেয়া মূল্যের থেকে প্রকৃত মূল্য পাঁচ-ছয় গুণ বেশী। কাজেই যিনি ওই দাম দেখিয়ে বিক্রী করছেন তাঁর বিক্রয় থেকে পাওয়া আয়ের অধিকাংশের জন্য বৈধ উৎস আয়কর কর্তৃপক্ষকে দেখাতে পারবেন না ("অন্যান্য আয়" হিসাবে দেখালেও অনেক বেশী হারে কর পরিশোধ করতে হবে) এবং সেজন্য অপ্রদর্শিত থেকে যাবে। অর্থমন্ত্রীর মতে এভাবে আইনের অসঙ্গতি থেকে এমনিতেই কালো টাকা তৈরী হচ্ছে।
তবে অর্থমন্ত্রী সম্ভবত অসাবধানতা বশত একটি ভুল তথ্য দিয়ে সবাইকে ঢালাও ভাবে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। বিক্রীর রেজিস্ট্রেশনের জন্য যে দাম বেঁধে দেয়া আছে সেটি সর্বোচ্চ নয়, বরং নূন্যতম, যাতে অন্ততঃ এই মূল্যের উপর উৎসে আয়কর সহ রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত যাবতীয় ফী আদায় হয়। কিন্তু এর চেয়ে অনেক গুন বেশি প্রকৃত মূল্য দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে তো কোন বাধা নেই।ওইসব অভিজাত এলাকায় প্রকৃত মূল্যে বিক্রীর রেজিস্ট্রেশন করে বিক্রয় থেকে পাওয়া পুরো অর্থ আয়কর রিটার্ন-এ প্রদর্শন করার নজির আমার কাছে আছে। আর অনেকেই যাঁরা এসব এলাকায় সরকারের কাছ থেকে জমি বরাদ্দ পেয়ে ডেভেলপার কোম্পানির মাধ্যমে এপার্টমেন্ট বিল্ডিং বানিয়ে ভাড়া দিচ্ছেন, তাঁরাও এপার্টমেন্ট বিক্রী না করে থাকলে এ ভাবে কালো টাকার মালিক হবার কথা নয়।