সীতাকুণ্ডের আগুন-দুর্যোগের সঙ্গে পদ্মা সেতুর সম্পর্ক কোথায়? ফেসবুক ব্যবহার করে একটা গোষ্ঠী পদ্মা সেতু আর সীতাকুণ্ডের আগুন-দুর্যোগকে সম্পৃক্ত করে গুজব ছড়াচ্ছে। সীতাকুণ্ডের কেমিক্যাল-আগুন দুর্যোগে দেশের অধিক অগ্নিবীরসহ এতগুলো মানুষের নির্মম মৃত্যুতে এবং শত শত মানুষের আহত হওয়ার ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরের মতোই ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। লোভী, বেপরোয়া এবং দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষিত মানুষের ভরপুর একটা সমাজে একজন প্রধানমন্ত্রী সব সমস্যার সমাধান করে দিতে পারেন না। একজন প্রধানমন্ত্রীই শুধু ১৭ কোটি মানুষকে ভালো রাখার জন্য দায়িত্বশীল নন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব থেকে শুরু করে প্রজাতন্ত্রের প্রতিজন কর্মকর্তা কর্মচারীর নিজস্ব দায়িত্ব আছে রাষ্ট্র এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার। কিন্তু দেশের প্রজাতন্ত্রের কতজন কর্মচারী নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন?
সীতাকুণ্ডের ডিপোতে কী ধরনের মালবাহী কনটেইনার রাখা ছিল, সেটি দেখার জন্য নিশ্চয় সরকারের একটা অধিদপ্তর আছে, বিভাগ আছে, সুনির্দিষ্ট আধিকারিক আছে। ওই এলাকার বিভাগীয় কমিশনার ছিলেন, ডিসি ছিলেন, ইউএনও ছিলেন। তারা কেন তাঁদের ম্যাজিস্ট্রেট পাঠাননি নিয়মিত। নিজেরা কেন সেখানে নিয়মিত সেখানে পরিদর্শন করেননি? কেন সরকারি পরিদর্শকরা আগে থেকে জানতেন না যে, সেখানে কোনো ধরনের কেমিক্যাল রাখা ছিল। বিপজ্জনক কেমিক্যাল রাখার অনুমতি না নিয়ে ডিপো কর্তৃপক্ষ আইন ভঙ্গ করে থাকলে তারা কি এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন? আমাদের বিশ্বাস অন্তত এই মহাদুর্যোগের পর সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে শিখবে, সচেষ্ট হবে। রাজনীতিবিদ এবং আমলারা রাষ্ট্রের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন সেটাই দেশবাসী কামনা করে।
বিগত দিনে বিএনপি-জামায়াত জোটের পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসের পুড়ে যাওয়া মানুষকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশে নির্মিত হয়েছিল বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট। দেশের একমাত্র এই বার্ন ইনস্টিটিউটে সীতাকুণ্ডের ঘটনায় নির্মমভাবে পুড়ে যাওয়া মানুষগুলোর চিকিৎসা চলছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে হেলিকপ্টারে করে পোড়া রোগী আনা হচ্ছে এখানে। অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিহতের সংখ্যা বাড়ছে এবং আহতদের মধ্যে যাঁরা বেঁচে যাবেন, তাঁরাও বাকি জীবন কষ্ট নিয়ে বাঁচবেন। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং স্পিকার এই ভয়াবহ দুর্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে শোক প্রকাশ করেছেন। দেশবাসী আরও স্বস্তি পেতেন যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে এক দিনের জন্য হলেও শোক ঘোষণা করা হতো।