সাম্প্রদায়িকতা জিনিসটা যে কেমন নির্মম, কদর্য ও ক্ষতিকারক, সেটা আমরা অবশ্যই জানি। না জানার কারণ নেই। সাম্প্রদায়িকতাকে চিনিও বটে। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে যে কী, তা সব সময় খেয়াল করি না। কেন ঘটছে তা-ও বুঝি না। আমরা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার কথাই বলছি। এই সাম্প্রদায়িকতার কারণে দুটি ভিন্নধর্মাবলম্বীর মানুষ পরস্পরকে ঘৃণা করে। ঘৃণা পারস্পরিক সংঘর্ষেরও জন্ম দেয়। রক্তপাত ঘটে। আমাদের দেশে যেমনটা ঘটেছে।
কিন্তু আমাদের দেশে তো বিভিন্ন ধর্মের মানুষ যুগ যুগ ধরে একত্রে বসবাস করেও এসেছে। হিন্দু কৃষক ও মুসলমান কৃষকের মধ্যে সংঘর্ষ বাধেনি। তাঁরা একে অপরকে উৎখাত করতে চাননি। নদীতে হিন্দু জেলে ও মুসলমান জেলে একসঙ্গে মাছ ধরেছেন। তাঁতিরা তাঁত বুনেছেন। সাধারণ মানুষ একে অপরের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি ও মসজিদের আজান একসঙ্গে মিশে গেছে। মানুষ একই পথ ধরে হেঁটেছে, একই বাজার-হাটে গিয়ে কেনাবেচা করেছে, থেকেছে একই আকাশের নিচে। কে হিন্দু, কে মুসলমান তা নিয়ে খোঁজাখুঁজি করেনি, নাক সিটকায়নি। তাহলে? সাম্প্রদায়িকতা তৈরি করল কারা? তৈরি হলো কীভাবে? কেন?
শুরু করল দুই দিকের দুই মধ্যবিত্ত—হিন্দু মধ্যবিত্ত ও মুসলিম মধ্যবিত্ত। ব্রিটিশ যুগেই এ ঘটনার সূচনা। তার আগে সম্প্রদায় ছিল, কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা ছিল না। ব্রিটিশ আমলে হিন্দু মধ্যবিত্ত শিক্ষায় ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠায় উঠতি মুসলিম মধ্যবিত্তের তুলনায় অন্তত পঞ্চাশ বছর এগিয়ে ছিল। মুসলিম মধ্যবিত্ত দেখল জায়গা তেমন খোলা নেই, অন্যরা দখল করে নিয়েছে। শুরু হলো দুই পক্ষের প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা। যারা দখল করে রেখেছে, তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। শাসক ব্রিটিশরা এ ব্যাপারে দুই পক্ষকেই উসকানি দিল, যাতে তাদের রেষারেষিটা আরও বাড়ে। বাড়লে ব্রিটিশের সুবিধা, কেননা ঝগড়াটা তখন শাসক-শাসিতের থাকবে না, হয়ে দাঁড়াবে হিন্দু-মুসলমানের।