পৃথিবী বদলাচ্ছে। এর সঙ্গে বদলে যাচ্ছে মানুষ আর মানুষের মন। এই বদলে যাওয়াটা সব সময় যে নেতিবাচক হবে, তা নয়; বরং মানুষের বদলে যাওয়ার মধ্যে ইতিবাচকতার যে দর্শনটি রয়েছে, সেটি নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। মানুষের সঙ্গে অর্থনীতির একটি যোগসূত্র আছে। যে মানুষ পৃথিবীতে না খেয়ে আছে, তার সঙ্গেও অর্থনীতির নিবিড় সম্পর্ক আছে। সেটি চোখ দিয়ে দেখার বিষয় নয়, বরং লজিক দিয়ে বোঝার বিষয়। যে মানুষ খাদ্যের কষ্টে ভুগছে, তার সঙ্গে অর্থনীতির কোনো একটি উপাদান যেভাবে সম্পৃক্ত থাকার কথা ছিল- তা নেই। যেমন- এখানে টাকার বিষয়টি উল্লেখ করা যেতে পারে। মানুষটার যদি টাকা থাকত, তা হলে তাকে খাদ্যের কষ্টে ভুগতে হতো না। তবে টাকার বিষয়টি বস্তুবাদী ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অর্থনীতির ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে টাকার চেয়ে মানুষের মানবিকতা ও মানসিকতার বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে সামগ্রিক স্বার্থ অগ্রাধিকার পাবে।
মানুষকে যখন টাকার লোভ থেকে সামাজিক দায়বদ্ধতার কাঠামোয় অভ্যস্ত করা সম্ভব হবে, তখন সামাজিক বৈষম্যের যে ব্যবধান- তা কমানো সম্ভব হবে। তবে এ কাজটি সফল করা খুব কঠিন। মানুষ যে সামাজিক ব্যবস্থা মেনে নিয়ে তার চারপাশের মানুষকে বিবেচনা করছে, এর অর্থনৈতিক সুফল সব মানুষ সমানভাবে পাচ্ছে না। কারও কাছে খুব বেশি টাকা থাকছে, কারও কাছে অনেক কম টাকা থাকছে, কারও কাছে টাকার পরিমাণটা অনিশ্চিত। ফলে হাইপোথেটিক্যাল ব্যক্তির আয় বৃদ্ধি পেলেও তা সবার আয় হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না। অথচ এই আয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা সামনে এনে এর প্রভাব মানুষের অন্যান্য প্রয়োজনীয় ও মৌলিক উপাদানের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন তখনই সফল হবে- যখন এই মানুষে মানুষে আয়বৈষম্য কমিয়ে আয় বৃদ্ধির সুফলতা সব মানুষের ক্ষেত্রে নিশ্চিত করা যাবে।