‘মাটি হচ্ছে মা। মাটি বলছে, তুমি আমাকে ১০ কেজি বীজ দিলা, এক মণ সার দিলা, তোমাকে বিনিময়ে কী দিলাম! ৫০ মণ ধান দিলাম, ৫০ মণ নাড়া দিলাম। তুমি কি কখনো চিন্তা করে দেখেছ, এটা কোথা থেকে এল! আমার শরীরের গচ্ছিত সম্পদ থেকে তোমাকে দিয়েছি। তুমি এক কাজ করো, ধানটা তুমি নাও, নাড়াটা আমাকে দাও। তুমি তো আমার সন্তান, তোমাকে বাঁচানো আমার কর্তব্য। চিন্তা করছি আমি মরে গেলে তোমার কী হবে? কাজেই তুমি তোমার স্বার্থে আমাকে বাঁচিয়ে রাখো।’ মনে পড়ে ২০১০ সালে নীলফামারীর অন্নপূর্ণা জৈব সার কারখানার স্বত্বাধিকারী রামনিবাস আগরওয়ালা এক সাক্ষাৎকারে আমাকে এ কথাগুলোই বলেছিলেন। আজও কানে বাজে। মাটি ও মানুষ পরস্পর যে নিবিড় সম্পর্কে জড়িয়ে আছে, তা আমরা অনেক সময়ই অনুধাবন করি না। মাটি ভালো তো ফসল ভালো।
যুগ যুগ ধরে মানুষ সাধারণত নতুন প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ রচনা করতে চেয়েছে। চেয়েছে নিরাপদ এক পৃথিবী গড়তে। তাই হয়তো অন্নদামঙ্গল কাব্যে ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর বলেন, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে’। এই সময়ে এসেও এ চাওয়ার কোনো পরিবর্তন নেই। আমরা এখন চাই আমার সন্তান যেন বাঁচে নিরাপদ খাদ্যে। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে। কেননা, জনসংখ্যার বিস্ফোরণে বর্ধিত মানুষের মুখে খাদ্য তুলে দেওয়ার চ্যালেঞ্জটাকেই আমাদের আগে মোকাবিলা করতে হয়েছে। খাদ্যের তাগিদে মাটির বুক থেকে শস্য কেড়ে এনেছি। অধিক উৎপাদনের নেশায় বলা চলে মাটির ওপর একধরনের অত্যাচারই করে চলেছি দিনের পর দিন। অধিক রাসায়নিক প্রয়োগ করে, ইচ্ছামতো কীটনাশক ছিটিয়ে মাটির গুণ নষ্ট করে দিয়েছি; যার বিরূপ প্রভাব আমরা নিজেরাই অনুভব করতে পারছি। আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রেখে যাচ্ছি ভয়াবহ হুমকির মুখে। তবে কেউ কেউ ঠিকই বুঝতে পারছেন মাটির গুরুত্ব। এখন কৃষি তথা খাদ্য উৎপাদনের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। ভালো ফসলের জন্য সবার আগে ভাবতে হবে মাটির স্বাস্থ্যের কথা।