ঈদে, বিশেষ করে ঈদুল ফিতরে, সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র শিশুরা ব্যতীত অন্য সবাই মা-বাবার কাছ থেকে ভালো-মন্দ উপহার পায়। রঙিন জামা-জুতো, খেলনা, পছন্দের গল্পের বই ইত্যাদি। কেউ হয়তো তার দীর্ঘদিনের বায়নার বাইসাইকেল বা ল্যাপটপ। কিন্তু কলাবাগানের ধনী-গরিব সব শিশু এবার সবাইকে টেক্কা দিয়ে যে উপহারটি পেয়েছে, তা এককথায় অনন্য।
তারা ফিরে পেয়েছে তাদের হুমকির মধ্যে পড়া খেলার মাঠটি। এই বারোয়ারি মাঠটিতে তারা এবং তাদের আগে তাদের বড় ভাইয়েরা, বাপ-চাচারা খেলাধুলা করে আসছে কয়েক যুগ ধরে। হঠাৎ একদিন ঘুম থেকে জেগে উঠে এই মহল্লাবাসী শিশু-কিশোররা জানতে পারল একচিলতে মাঠটি তাদের হাতছাড়া (নাকি পা-ছাড়া?) হয়ে গেছে। কী ব্যাপার? না, ঢাকার জেলা প্রশাসন এই খাসজমিটি বিক্রি করে দিয়েছে পুলিশ বিভাগের কাছে। পুলিশ বিভাগ ওই জায়গায় নির্মাণ করবে কলাবাগান থানা ভবন। শুনে শিশু-কিশোরদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। তারা এখন খেলাধুলা করবে কোথায়? বড়রা বললেন, আমরা রোজ সকাল-সন্ধ্যায় জমায়েত হয়ে সুখ-দুঃখের কথা বলব কোথায়? আর এলাকাবাসী কেউ মারা গেলে তার জানাজার নামাজ পড়ব কোথায়? পুলিশ কর্তৃপক্ষ বলল, সেটা আমরা কী জানি। আমরা জায়গা বরাদ্দ পেয়েছি ম্যালা কাঠখড় পুড়িয়ে। এখন আমরা দ্রুত থানা কমপ্লেক্স বানাব ওখানে। তোমরা খেলবে কোথায়, জানাজা পড়বে কোথায়, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখ ইত্যাদির অনুষ্ঠান করবে কোথায়, সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। যাত্রাপালার বিবেকের মতো সমাজের বিবেক তাদের কাছে জানতে চাইল, বাচ্চারা খেলাধুলা না করতে পারলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরে গেলে তো গাঁজা-ভাং খাওয়া শুরু করবে, কিশোর গ্যাংয়ে নাম লেখাবে, তখন কী হবে? জবাবে তারা বলল, ইস, অত সোজা? ঠ্যাঙিয়ে হাত-পা গুঁড়ো করে দেব না? ব্যস। মামলা ডিসমিস। পুলিশ বিভাগ বিপুল উৎসাহে থানা বানানোর কাজ শুরু করে দিল। আর এদিকে মহল্লাবাসী ক্ষোভে-দুঃখে ফুঁসতে লাগল। তাদের মধ্যে যাঁরা অ্যাকটিভিস্ট বলে পরিচিত, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা, প্রতিরোধ করা যাঁদের সহজাত, তাঁরা সোচ্চার হলেন, সংগঠিত করলেন এলাকাবাসীকে, জাতির দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন সভা-সমিতি করে, পত্রপত্রিকা ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে।