‘সাদা হাতি’ প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও ঝুঁকিতে ফেলতে পারে

বণিক বার্তা ড. মইনুল ইসলাম প্রকাশিত: ০৭ মে ২০২২, ০৮:১৭

বাংলাদেশে গত এক দশকে অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে, যেগুলোর কয়েকটিকে স্বল্প প্রয়োজনীয় অথবা অপ্রয়োজনীয় আখ্যা দেয়া চলে। চলমান প্রকল্পের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প এবং চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী হয়ে কক্সবাজার ও ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ ‘সাদা হাতি’ প্রকল্পের উদাহরণ। রাশিয়ার ১২ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণসহ মোট ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে বলে দাবি করা হচ্ছে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হলো, রাশিয়া ভারতে প্রায় একই ক্যাপাসিটির পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করে দিয়েছে রূপপুরের অর্ধেক ব্যয়ে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠা যৌক্তিক যে বাংলাদেশ কেন এত বেশি বৈদেশিক ঋণ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে এ পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের জন্য চুক্তি করেছে? ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেক বিকল্প প্রযুক্তি বিশ্বে রয়েছে, যেখানে রূপপুর প্রকল্পের অর্ধেক ব্যয়ে ওই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। তাহলে এত ব্যয়বহুল প্রকল্প বাংলাদেশ কেন গ্রহণ করল? এ ঋণ পরিশোধে ২০ বছর সময় লাগবে বলে সরকারিভাবেই জানানো হচ্ছে, এক্ষেত্রে প্রতি কিস্তিতে বাংলাদেশকে সুদাসলে কত অর্থ পরিশোধ করতে হবে তা জনগণকে জানানো হোক।


একই সঙ্গে যে দুটো রেলপথ প্রকল্পের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাও অপ্রয়োজনীয়। ওয়াকিবহাল মহল সহজেই বুঝবেন যে পদ্মা সেতুর সড়কপথ চালু হওয়ার পর ওই সেতুর মাধ্যমে ঢাকা-যশোর-পায়রা পর্যন্ত নির্মীয়মাণ রেলপথের অর্থনৈতিক ‘ফিজিবিলিটি’ ভবিষ্যতে খুব বেশি আকর্ষণীয় হওয়ার তেমন সুযোগ থাকবে না, কারণ রেলপথটি পণ্য পরিবহনের তুলনামূলক খরচের বিবেচনায় সড়কপথের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক বিবেচিত হবে না। ফলে ভবিষ্যতেও রেলপথটি ‘আন্ডার-ইউটিলাইজড’ থেকে যাবে। অতএব, ওই প্রকল্পের সম্ভাব্য আয় দিয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা চীনা ঋণের অর্থে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির সুদাসলে কিস্তি পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। এমনকি ভারতকে এ রেলপথ ব্যবহার করতে দিলেও অদূরভবিষ্যতে প্রকল্পটি ‘সাদা হাতি’ প্রকল্পই থেকে যাবে। একই আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম-দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথ প্রকল্প নিয়ে। ‘কুনমিং ইনিশিয়েটিভ’ আঞ্চলিক সহযোগিতা কর্মসূচির অধীনে ‘বিসিআইএম ইকোনমিক করিডর’ যখন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার তোড়জোড় ছিল, তখন বাংলাদেশকে মিয়ানমার হয়ে চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিংয়ের সঙ্গে যুক্ত করার উদ্দেশ্যে রেলপথটি নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। কিন্তু ভারতে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ভারত বিসিআইএম ইকোনমিক করিডর প্রতিষ্ঠার চুক্তি থেকে সরে গেছে। অতএব, এ রেলপথও অদূরভবিষ্যতে ‘আন্ডার ইউটিলাইজড’ থাকা ছাড়া গত্যন্তর নেই। এ রেলপথের আয় দিয়ে কখনই প্রকল্পটির ঋণের কিস্তি শোধ করা যাবে না। তবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণে যেহেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে, তাই ভবিষ্যতে এ ঋণের কিস্তি পরিশোধ রূপপুর প্রকল্পের চেয়ে ‘কম অসহনীয় বোঝা’ হওয়ার কথা! এ তিনটি প্রকল্পই ইকোনমিক ফিজিবিলিটির দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হবে না। শ্রীলংকার ঋণের ফাঁদ সম্পর্কে আলোচনার সময় সেজন্যই তিনটি প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যতে ঋণের বোঝা সৃষ্টি করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত ব্যক্ত করছেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us