গতকাল ছিল ৫ মে। ২০১৩ সালের এই দিনে ঢাকার শাপলা চত্বরে যা ঘটেছিল সেটি এখন হেফাজতি তাণ্ডব হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। পবিত্র ঈদের পর পর ধর্মের নামে চরম অধর্মের একটি বিষয়ের ওপর লিখতে হবে তা ভাবিনি। কিন্তু তারিখটি স্মরণে আসায় মনে হয়েছে ধর্মের নামে এত বড় অধর্ম-অপকর্মের ফলে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে যে বিষফোড়ার সৃষ্টি হয়েছে, যথাশিগগির তার ব্যবচ্ছেদ করতে না পারলে সামনে আরো বড় বিপদ আসন্ন। বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এবং একবিংশ শতাব্দীর বৈশ্বিক চাহিদা আর হেফাজতের ১৩ দফার সহাবস্থান অসম্ভব ও অবাস্তব। জোড়াতালি দিয়ে বেশি দিন চলা যাবে না।
ধর্মীয় উগ্রবাদ, অন্ধবিশ্বাস, অযৌক্তিকতা, অনড়, অবৈজ্ঞানিক চিন্তা-চেতনা থেকে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার জন্ম হয় এবং ধর্মীয় বিদ্বেষের সৃষ্টি হয়। ধর্মীয় বিদ্বেষ মানেই হলো সংঘাত অনিবার্য। সাম্প্রদায়িকতার পরের স্তর জঙ্গিবাদ। আর জঙ্গিবাদ থেকে সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠনের উৎপত্তি, যার শেষ স্তর কট্টর ওয়াহাবিতন্ত্রের ধর্মবাদী রাষ্ট্র ও সমাজ, যার উদাহরণ তালেবানি আফগানিস্তান। জামায়াত-হেফাজতের নেতারা নব্বইয়ের দশকের শেষভাগে ঘন ঘন তালেবানি আফগানিস্তানে সফরে যেতেন এবং দেশে ফিরে বলতেন, সেখানে তাঁরা নাকি বেহশত দেখে এসেছেন। তখন আফগানিস্তানের ৯০ শতাংশ মানুষ দরিদ্রতার কশাঘাতে জর্জরিত। নারী শিক্ষা সম্পূর্ণ বন্ধ। সারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন একটা দেশ। সারা পৃথিবীর সশস্ত্র জঙ্গি সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল। এটাই হলো হেফাজতি নেতাদের বেহেশতের উদাহরণ। সুতরাং ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতি তাণ্ডবের প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য এবং সেটির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে চরম মেরুকরণের যে চিত্রটি দেখা গেছে তার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সবাইকে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে সতর্ক করতে চাই।
প্রথমে হেফাজতের পরিচিতি ও স্বরূপের খানিকটা উল্লেখ করা যাক। হেফাজতে ইসলাম—এই নামের সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক উৎপত্তি ঘটে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি। কট্টর উগ্রপন্থী ওয়াহাবিবাদী ধর্মীয় মতবাদ প্রচারের জন্য ভারতের দেওবন্দে ১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসার একান্ত অনুসারী হিসেবে বাংলাদেশের সব কওমি মাদরাসার লাখ লাখ ছাত্র ও শিক্ষক এই হেফাজতে ইসলামের মৌলিক ভিত্তি ও শক্তি। কওমি মাদরাসার শিক্ষাক্রমের ওপর কখনোই কোনো সরকারের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ ছিল না এবং এখনো নেই। এই যে হাজার হাজার মাদরাসা, বিশাল পরিমাণ জায়গা-জমি, বিশাল বিশাল অট্টালিকা, শিক্ষকদের আয়েশি জীবন, হেলিকপ্টারে ভ্রমণ ইত্যাদির অর্থ কোথা থেকে আসে, কিভাবে খরচ হয় তার কিছুই রাষ্ট্রের কেউ জানে না। সেখানে কী শিক্ষা দেওয়া হয় তার খবরও কেউ রাখে না। সেখানে জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয় না, জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না।