চট্টগ্রামে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে 'কিশোর গ্যাং'। করোনা মহামারির দুই বছর কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রাজনীতিক 'বড় ভাইদের' ছত্রছায়ায় এখন তারা আরও বেপরোয়া। চাঁদাবাজির পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে মারামারি-খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়ছে তারা। গত ১৫ দিনে খুন হয়েছে দুই শিক্ষার্থী। চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ-ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তবে সংশ্নিষ্টরা বলছেন, কিশোর গ্যাংয়ের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা বড় ভাইদের আইনের আওতায় আনা না হলে এই অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না।
২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি স্কুলছাত্র আদনান ইসপার খুন হওয়ার পর চট্টগ্রামে প্রথম কিশোর গ্যাংয়ের জোরালো অস্তিত্বের খবর জানা যায়। এরপর কিশোর গ্যাংয়ের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা হিসেবে ৪৭ বড় ভাইয়ের নাম উঠে আসে নগর পুলিশের তালিকায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তাদের কেউ কেউ এখন নিষ্ফ্ক্রিয়। কিন্তু নতুন করে আরও আটজনের সাতটি গ্রুপ এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো নগর। সমকালের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে আট বড় ভাইয়ের নাম ও তাদের অপকর্মের নানা খতিয়ান।
এ প্রসঙ্গে র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ সমকালকে বলেন, 'নতুন করে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বাড়ার বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। গ্যাং গডফাদারদের নির্মূলে অভিযান চালানো হবে।'
রামপুর-সরাইপাড়ার মূর্তিমান আতঙ্ক ফয়সাল-সাজ্জাদ : নগরের ১২ নম্বর সরাইপাড়া ও ২৫ রামপুর ওয়ার্ডের রামপুর, পানিরকল, মৌসুমী আবাসিক এলাকা, নয়াবাজার, কাঁচা রাস্তার মোড়, ধোপাপাড়া এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক রিহান ফয়সাল চৌধুরী ও ইব্রাহিম সাজ্জাদ। এই দু'জনের একটি কিশোর গ্যাং রয়েছে। ফয়সাল নিজেকে ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দিলেও তার কোনো পদ-পদবি নেই। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা স্থানীয় কাউন্সিলর আবদুস সবুর লিটন। কেউ বাড়ি কিংবা নতুন ভবন নির্মাণ করতে গেলে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহের দাবি নিয়ে হাজির হয় তারা। তাদের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে নির্মাণসামগ্রী না নিলে দিতে হয় চাঁদা। গত ২১ মার্চ নির্মাণাধীন একটি ভবন থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে ফয়সাল, সাজ্জাদসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ছাড়া পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে তারা। গত ৩ এপ্রিল নগরের নয়াবাজার চৌধুরী কনভেনশন সেন্টারের সামনে চা দোকানি মোহাম্মদ কাউসার ও মফিজুর রহমানকে মারধর করে ফয়সাল ও তার অনুসারীরা।
মারধরের শিকার মোহাম্মদ কাউসারের অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের লোকজন দোকান উঠিয়ে দিয়েছিল। দোকান বসাতে চাইলে ফয়সাল চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ এনে তাকে ও তার বাবাকে মারধর করা হয়। গত মার্চে গভীর রাতে তল্লাশির সময় হালিশহর থানা পুলিশের ওপর চড়াও হয় ফয়সাল। তাকে আটক করা হলেও পরে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায়। এছাড়া চাঁদা না দেওয়ায় পাহাড়তলী থানার বাঁচা মিয়া রোডে এম মাহমুদ একাডেমির পাশে একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে কয়েক হাজার ইট নিয়ে যায় ফয়সাল ও তার অনুসারীরা। পরে দাবি করা চাঁদা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করেন বাড়ির মালিক। সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল রাতে পশ্চিম নাসিরাবাদ ঈদগা কাঁচারাস্তার মোড় এলাকায় কিশোরদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে শাহরিয়ার নাজিম জয় নামে অষ্টম শ্রেণি পড়ূয়া এক কিশোর খুন হয়।