পরিবেশ আইনবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী। প্রায় তিন দশক ধরে বাংলাদেশে পরিবেশ-সুশাসন নিশ্চিত করতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এ জন্য তাকে ২০০৭ সালে পরিবেশ পদকে ভূষিত করে। ২০০৯ সালে তিনি পরিবেশবিষয়ক সম্মানজনক আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘গোল্ডম্যান পুরস্কার’ লাভ করেন। একই বছর যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিন তাকে বিশ্বের অন্যতম ‘এনভায়রনমেন্টাল হিরো’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সবশেষ এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসে যুক্তরাষ্ট্রের ‘আন্তর্জাতিক নারী সাহসিকা’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার আন্দোলন এবং ঢাকার উদ্যান-পার্ক-জলাশয়-উন্মুক্ত স্থানের সংকট ও প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন পরিবেশ আইনবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান : জাতীয় বলেন কিংবা আন্তর্জাতিক, কোনো সংস্থা বা ব্যক্তির এই ঘটনাকে বেআইনি হিসেবে বিবেচনা না করে অন্য কোনোভাবে দেখার সুযোগ নেই। কেউ কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকলে কিংবা কোনো অপরাধ করতে যাচ্ছেন এমন সন্দেহভাজন কাউকে ধরতে পারে। ধরে নিলেও পুলিশ তাকে লকআপে আটকে রাখতে পারে না। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। পুলিশের তো এখানে সন্দেহ করার কিছু ছিল না। কারণ পুলিশ প্রকাশ্যে একটা কাজ করছিল এবং সৈয়দা রত্নাও প্রকাশ্যে সেটার ভিডিও করছিলেন। পুলিশ একটা খেলার মাঠে দেয়াল তুলছিল। দেয়াল তোলার ভিডিও করায় তো নির্মাণকাজে বাধা দেওয়া হয় না। পুলিশ তাকে ধরেছে গায়ের জোরে। এলাকাবাসীর মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতে। আর সৈয়দা রত্না না হয় ভিডিও করছিলেন, তার ছেলে কী অপরাধ করেছিল, তাকেও কেন ধরা হলো? যে ছেলেটার বয়স আঠারোও হয়নি তাকেও লকআপে আটকে রাখা হলো। আর ১৩ ঘণ্টা আটকে রেখে যে মুচলেকা নেওয়া হলো, সেটা কীসের ভিত্তিতে। বলা হয়েছে তিনি আর কখনো মাঠরক্ষায় কোনো আন্দোলন করতে পারবেন না এই শর্তে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে। এটা কোনো গণতান্ত্রিক দেশে কীভাবে সম্ভব? ফলে আমার বিবেচনায় পুলিশের এই পুরো কাজটাই, পুরো প্রক্রিয়াটাই বেআইনি। অবশ্যই এর তদন্ত ও বিচার হওয়া দরকার।
জায়গাটি খেলার মাঠ এবং উন্মুক্ত স্থান হিসেবেই রক্ষা পেতে হবে। এর আর অন্য কোনো বিকল্প নেই। কারণ এটা ইতিমধ্যেই ঢাকার খসড়া বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) একটি উন্মুক্ত স্থান হিসেবেই চিহ্নিত। এই বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা মন্ত্রিসভা কর্তৃক অনুমোদিত। এটা গেজেটের মাধ্যমেও প্রজ্ঞাপিত। আর পরবর্তীকালে তো আর কোনো গেজেট আসেনি যা দিয়ে আগের গেজেটকে বাতিল বলা যাবে। যেখানে গেজেট প্রকাশ করে, জায়গাটিকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে দেখিয়ে বলা হয়েছে যে, কারও কোনো আপত্তি থাকলে ৬০ দিনের মধ্যে সেটা জানাতে হবে। সেই সময় তো কবেই পার হয়ে গেছে। পুলিশ তো কোনো আপত্তি উত্থাপন করেনি। তাহলে এই মাঠের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। এটা হলো আইনগত দিক। দ্বিতীয় আরেকটি বিষয় হলো, আমরা ১৯৮০ সালের নথিপত্রে দেখছি তৎকালীন ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন এখানে শিশুপার্ক নির্মাণ করতে চেয়েছিল। তৃতীয়ত এখন সরকার প্রধান যে সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন যে, জায়গাটি এলাকাবাসী যেভাবে ব্যবহার করত সেভাবেই ব্যবহার করবে। এলাকাবাসী এই জায়গাকে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করার পাশাপাশি জানাজার নামাজ, ঈদের নামাজের স্থান এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদির জন্য ব্যবহার করত। ফলে পুলিশের তো জায়গাটিকে ভিন্নভাবে ব্যবহার করার আর কোনো সুযোগ নেই।