পবিত্র ঈদুলফিতর অত্যাসন্ন। বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য ঈদুলফিতরের উৎসবটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ৩০ দিন সিয়াম সাধনার পর ঈদুলফিতরের দিনটি প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আনন্দের সংবাদ নিয়ে আসে।
এই ঈদ শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতি, প্রৌঢ় এবং বৃদ্ধ-সবার জন্য আসে খুশির বারতা নিয়ে। সব মুসলিম পরিবার নিজ নিজ সাধ্যের মধ্যে ঈদে ভালো খাবারদাবারের আয়োজন করে। এই খাবার শুধু একটি পরিবারের সদস্যরা গ্রহণ করে না, নিজের আনন্দ পাড়া-পড়শি এবং আত্মীয়দের সঙ্গে ভাগ করে খাওয়ার আনন্দকে আরও বহুগুণ বৃদ্ধি করে।
ঈদের দিন সকালে নতুন কাপড় পরে অথবা পুরোনো কাপড়কে ধুয়ে পরিচ্ছন্ন করে মসজিদে কিংবা ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করে অনির্বচনীয় আনন্দের স্বাদ গ্রহণ করে মুসলিম জনগোষ্ঠী। শিশুরা আবদার জুড়ে দেয় ঈদের জামাতে শরিক হওয়ার জন্য। শিশুর অভিভাবকরাও শিশুদের নিয়ে নামাজ আদায় করার জন্য চলে যায় মসজিদ কিংবা ঈদগাহে।
এসব ছোট শিশুর ঈদ জামায়াত এবং আনুষঙ্গিক উৎসবচর্চা কেন করতে হয়, সে সম্পর্কে তেমন কোনো উপলব্ধি থাকে না। তবে তারা বুঝতে পারে ঈদের দিনটি বছরের অন্যান্য দিনগুলোর তুলনায় অনেক বেশি পবিত্র ও আনন্দমণ্ডিত। ঈদের দিনটিতে অমুসলিম পাড়া-পড়শিরা মুসলিম প্রতিবেশীদের আনন্দ আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে দ্বিধাবোধ করে না। এভাবে ঈদুলফিতরের দিনটি ধনী-গরিব, হিন্দু-মুসলমান সবার এক সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়।
কয়েক দশক ধরে ঈদকেন্দ্রিক উৎসবকে ঘিরে উদ্যোগ, বিনিয়োগ এবং বাজারজাতকরণের অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে বিশাল আকার ধারণ করেছে। একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশের ঈদের বাজারে ভারতীয় পোশাক-আশাক এবং শাড়ির ভয়ানক দাপট ছিল। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে বেশ কিছু পোশাকের ব্র্যান্ডের আবির্ভাব ঘটেছে।
নন্দনতাত্ত্বিক দিক থেকে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা পাঞ্জাবি-পায়জামা, শার্ট ও শাড়ি প্রতিটিতেই রুচির বৈচিত্র্য এনেছে। আরামদায়ক ও রুচিসম্মত হওয়ার ফলে সাফল্যজনকভাবে ঈদের বাজারে বিদেশি ব্র্যান্ডকে সংকুচিত করতে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা সফল হয়েছেন। এখন বাজারে ব্র্যান্ড পোশাকের ৭০ ভাগ বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে এসে গেছে।
এই সাফল্যে বাংলাদেশের জনগণ গর্ববোধ করতে পারে। ১৫ রমজান থেকে মানুষ কেনাকাটা শুরু করে। কেনাকাটার এই হিড়িক চাঁদরাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। শুধু পোশাক-আশাকই নয়, ঈদসংশ্লিষ্ট বেশকিছু পণ্যেরও বাজার রমরমা হয়ে পড়ে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে পাদুকা, সুগন্ধি, টুপিসহ অনেক ধরনের পণ্য।