পাকিস্তান আমলে (১৯৪৭-৭১) আমাদের ব্যাংক খাতে দুই ধরনের কর্মী ছিল। এক শ্রেণীর কর্মী ছিল যারা ব্যাংকের শাখায় দৈনন্দিন কর্মসম্পাদন করতেন। অর্থাৎ তারা ব্যাংকের রুটিন নিয়মিত পালন করতেন। তারা প্রশিক্ষিত কর্মী ছিলেন। আবার আরেক ধরনের কর্মী ছিলেন যাদের কাজ ছিল ব্যাংকের উন্নয়নের জন্য (ডেভেলপমেন্ট) নিয়োজিত থাকা। এখানে উন্নয়ন অর্থ হচ্ছে আমানত (ডিপোজিট) ও ব্যবসা আনা। রফতানি, আমদানি, সাধারণ ব্যবসা ইত্যাদিতে নিয়োজিত ব্যবসায়ীদের ব্যাংকে আনা। তারা ঋণ নেবে, ঋণপত্র খুলবে, গ্যারান্টি ব্যবসা করবে। বলাবাহুল্য, ব্যাংকের এ ধরনের স্টাফই প্রয়োজনীয় ছিল। দৈনন্দিন ব্যাংকিং করা এবং আমানত ও ব্যবসা আনা উভয়েই গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য ব্যাংক মালিকদের কাছে আমানত ও ব্যবসা আনাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
মালিকরা পশ্চিম পাকিস্তানি। আমানতকারী ও ব্যবসায়ীরা বাঙালি। অতএব এমন কর্মী দরকার যাদের ভালো ‘কানেকশন’ আছে, যারা তা ব্যবহার করে ব্যবসা আনবেন। এদের সাধারণভাবে ‘ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকার’ বলা হতো। যেহেতু ব্যবসা আনেন তাই তাদের কদর ছিল। তারা সাধারণত সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। এদের বেতন-ভাতা ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। অথচ যারা সত্যিকারের ব্যাংকার, দৈনন্দিন কাজ চালাচ্ছেন, আমানত গ্রহণ করছেন, টাকা প্রদান করছেন, ঋণপত্র খুলছেন, ঋণ দিচ্ছেন, ঋণের কাগজপত্র প্রক্রিয়াজাত করছেন, খাতাপত্র রাখছেন, হিসাবরক্ষণ করছেন, হিসাব নিরীক্ষণ করছেন—তাদের পারিতোষিক ছিল তুলনামূলকভাবে কম। পাকিস্তানি মালিকরা দুই ধরনের কর্মী সৃষ্টি করে ব্যবসায় খুবই সাফল্য দেখান। স্বাধীনতার পর এদের সমন্বয় করে নতুন ব্যাংকে পদায়ন করা হয়। বেশি বেতন-ভাতার কারণে ‘ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকাররা’ এগিয়ে থাকেন। তাদের অনেকেই ব্যাংকপ্রধান, গভর্নর পর্যন্ত হয়েছেন।