করোনাভাইরাস সংক্রমণ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার সময়ে যে আতংক ও উৎকণ্ঠা মানুষের মনে ছিল, তাতে অনেকেই মনে করেছিলেন যে- এবার লুটেরা, লোভী, ও অন্যায়কারীরা হয় ধ্বংস হবে, নইলে সংযত বা পরিশুদ্ধ হবে। কিন্তু নানা সংস্থার তথ্য-উপাত্ত বলছে, কোভিডের মধ্যেও কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে, সম্পদশালীরা আরও সম্পদশালী হয়েছে, দরিদ্র হতদরিদ্র হয়েছে, ক্ষমতাশালীদের ক্ষমতার দেমাগ, ও দৌরাত্ম্য আরও বেড়েছে। জাতীয় এবং বৈশ্বিক চিত্রটি হতাশাব্যঞ্জকই নয়, রীতিমত নৈরাজ্যকর।
কোভিড মহামারীর কারণে জাতীয় ও বৈশ্বিক অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ প্রান্তিক মানুষের অবস্থানের যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে করে প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের সরকারের কাছে দায়িত্বশীল, ও সংযত আচরণ কাম্য ছিল। বিশেষ করে আমেরিকা, চীন, রাশিয়াসহ বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলোর কাছে প্রত্যাশা ছিল- তারা প্রভাববলয় বিস্তারের রাজনীতি, সমরাস্ত্র উৎপাদন ইত্যাদি থেকে সাময়িকভাবে হলেও বিরত থাকবে এবং ভবিষ্যত মহামারী প্রতিরোধ-স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।
কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, ভালো মানুষের ‘আইডিয়ালিস্টিক’ চিন্তাভাবনা, ও মঙ্গলকামনা দিয়ে পৃথিবী চলে না। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে স্প্যানিশ ফ্লুতে ৫ কোটি মানুষ মারা যাবার পরে শুরু হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ওই যুদ্ধেও মৃত্যু হয়েছিল ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষের। নির্মম হলেও সত্য যে, মানুষের ইতিহাসের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে গণহত্যা, যুদ্ধ, মহামারী, জীঘাংসা, ও হানাহানি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নিষ্ঠুরতায় ক্ষতবিক্ষত কবিগুরু ১৯৩৯ সালে লিখলেন বা লিখতে বাধ্য হলেন, “নাগিনীরা দিকে দিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস / শান্তির ললিত বাণী শুনাইবে ব্যর্থ পরিহাস-”।
বিদ্যমান আভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে – সারা বিশ্বে কি কখনও নিরবচ্ছিন্ন স্থিতিশীলতা ও শান্তি বলে কিছু ছিল? রাজ্যভেদে, সাম্রাজ্যভেদে কখনো কখনো সমৃদ্ধি, শান্তি ও স্থিতিশীলতা ছিল বৈকি, কিন্তু সেটি রাজা, সম্রাট বা রাণীর প্রজাহিতৈশী, পরার্থপর ও জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার পৃষ্ঠপোষক হওয়ার কারণে।