ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের ৮১তম জন্মদিন আজ। শুভ জন্মদিনের মহতী এই মুহূর্তে আমরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাই 'হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ- স্যার'।
১৯৪২ সালের ১৮ এপ্রিল হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার রতনপুর গ্রামে এক সল্ফ্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম। তারপর সিলেট এমসি কলেজ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা অর্থনীতিতে অধ্যয়নের জন্য। পড়ার ইচ্ছা ছিল বিজ্ঞানে। কিন্তু 'বেরসিক' এবং জটিল রসায়ন তার উৎসাহের গোড়া কেটে দিলে তিনি বিজ্ঞানের বন্ধনমুক্ত হয়ে অর্থনীতি বেছে নিলেন। সত্যি কথা বলতে কি, সমাজ এবং রাজনীতি সচেতন এই মানুষটির জন্য অর্থনীতি যে কতটা উপকারী ছিল, তা নিশ্চয় তিনি টের পেয়েছিলেন পরবর্তী জীবনে।
দুই.
মানবতাবোধ, মেধা ও মননে সিদ্ধ এই মানুষটি প্রশাসক, শিক্ষক এবং সংগঠক হিসেবে বহু গুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করেছেন। করেছেন- বলছি কেন, এই বয়সেও করে চলেছেন। তবে তার ভাগ্য ভালো যে, কর্মজীবনের প্রায় শুরুতেই এক স্বপ্নদ্রষ্টার খুব কাছে ঘেঁষার সুযোগ পেয়েছিলেন। সমুদ্রের বিশালতা বুঝতে গেলে যেমন সমুদ্রের কাছাকাছি যেতে হয়, তেমনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুব কাছে থেকে তিনি বুঝেছেন মহান ওই মানুষটির মনের বিশালতা। অতি নিকটে থেকে জানতে পেরেছেন জাতির পিতার স্বপ্নের কথা। সম্ভবত, বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে কাজ করা ছিল ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের জীবনের এক স্বর্ণ-সৌভাগ্য; জীবন-পঞ্জিকায় এক সোনালি অধ্যায়। ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন আর তাকে দেখেছেন বলেই তিনি জাতির পিতার চিন্তা-চেতনার প্রতি অদ্যাবধি অতটা নৈষ্ঠিক নিবেদিত।
তিন.
সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া পর্যন্ত সততা, নিষ্ঠা আর দক্ষতা দিয়ে সব পর্যায়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন এই মানুষটি। এক সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নিযুক্ত হন। প্রসঙ্গত বলে নেওয়া ভালো, বিশেষত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদটি লালন শাহের ওই গানের মতো, 'আমি শ্যাম রাখি না কুল রাখি হয়েছে মোর জ্বালা'। একদিকে সরকারের নিয়ন্ত্রণ, অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন! অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে যে দু-একজন ভারসাম্যমূলক এ কাজটি করতে পেরেছেন; তিনি তাদের অন্যতম। তার আমলে ব্যাংকিং খাতে স্ক্যাম হয়েছে বলে অন্তত আমার মনে পড়ছে না। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে জোরেশোরে সমালোচনার কথাও কানে আসেনি। মুদ্রাবাজার তথা ব্যাংকিং খাতে তেমন কোনো অস্থিরতা ছিল না। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংক সব প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হয়েছিল।
তা ছাড়া চাকরি-পরবর্তী সময়ে জাতীয় নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থে সরকার কর্তৃক গঠিত বেশ ক'টি তদন্ত কমিশনের প্রধান হয়ে দক্ষতার সঙ্গে সময়মতো বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন দাখিল করে নাগরিক সমাজ থেকে সুনাম অর্জন করেছেন। সে তদন্তের ফলাফল আলোর মুখ দেখেছিল কিনা, সে বিতর্কে আপাতত নাইবা যাওয়া হলো।