কলেরা-ডায়রিয়া গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের পেটের অসুখ। একসময় এগুলো মহামারি আকারে ছড়াত এবং শহর-গ্রামের মানুষ দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ত। একসঙ্গে কয়েকটি গ্রামের মানুষ কলেরার সংক্রমণে উজাড় হয়ে যাওয়ার কথা এখন শুধু গল্প। দূষিত পানি পরিহার এবং ওরস্যালাইনের আবিষ্কারে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। সরাসরি হাওড়, পুকুর, নদীর পানি পান করা থেকে মানুষ সাবধান হয়েছে, তারপর এর প্রতি মানুষের ভীতি কমে গেছে।
কিন্তু কলেরা-ডায়রিয়ার সংক্রমণ থেমে যায়নি। এখনো বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর এসব রোগে বহু মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশে সারা বছর কোথাও না কোথাও ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা যায়। গরম শুরু হলে এর প্রকোপ শুরু হয় এবং বড় বড় শহরের দরিদ্র ও জনবহুল এলাকায় এর সংক্রমণ বেড়ে যায়। এ বছর মার্চের শুরু থেকে রাজধানী ঢাকায় এর প্রকোপ প্রবল হয়ে উঠতে থাকে। এখনো তা অব্যাহত আছে।
মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে মহাখালীর আইসিডিডিআর,বির কলেরা হাসপাতালে রোগী ভর্তি শুরু হতে থাকে। সেখানে যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ এলাকার রোগী বেশি ছিলেন বলে জানা যায়। এসব রোগী শরীরে মারাত্মক পানিশূন্যতা নিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় ভর্তি হন। নিয়ন্ত্রণহীন পাতলা পায়খানা, ঘন ঘন বমি, জ্বর, অবশ শরীর নিয়ে এসেছেন অনেকে। তাদের পরপর চারটি করে স্যালাইন দিতে হচ্ছে। ১৮ মার্চ থেকে প্রতিদিন ১ হাজারের বেশি ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হন। সাত দিনের মধ্যে এ সংখ্যা বেড়ে ১৩০০ ছাড়িয়ে গেলে হাসপাতালে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় চিকিৎসা নিয়ে সংকট তৈরি হতে থাকে। এ অবস্থায় দুটি বড় তাঁবু টাঙিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু হয়।
গত ২০ মার্চ ছিল বিশ্ব পানি দিবস। সেদিন আইসিডিডিআর,বির কলেরা হাসপাতালে প্রতি ঘণ্টায় ৫০-৬০ জন রোগী মারাত্মক পানিশূন্যতা নিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় ভর্তি হন। সুজলা-সুফলা পানির দেশ বাংলাদেশ, বন্যার সময় দেশটির সিংহভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে পানি উধাও হয়ে যায়। মিঠা পানির উৎস নদী, খাল, বিল শুকিয়ে চৌচির হয়ে যায়। গ্রামের মানুষ টিউবওয়েলের পানি পানে অভ্যস্ত হলেও শহরের মানুষ ওয়াসার পাইপে সরবরাহকৃত পানি পান করেন। ওয়াসার অতি পুরোনো পানির পাইপলাইনে ত্রুটি থাকায় সে পানিতে ময়লাসহ মারাত্মক দূষণ পাওয়া গেছে। অধুনা গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় পানি ফুটিয়ে পান করার প্রবণতা শহরের নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে কমে গেছে। বস্তিতে বসবাসরত মানুষ কোনোমতে সংগ্রহ করা পানি না ফুটিয়েই পান করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। এটি ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির একটি কারণ হতে পারে।