হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ২২ শতাংশ রোগী অনিয়ম-দুর্নীতির মুখে পড়েন। সরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের কাছে নিয়মবহির্ভূতভাবে ৪০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালে সেবা সম্পর্কিত তথ্য না দেওয়া, দুর্ব্যবহার ও সেবা গ্রহণে প্ররোচিত করার মতো অনিয়মের অভিযোগও মিলেছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) 'করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসন :অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির রিসার্চ ফেলো মো. জুলকারনাইন এ গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে গত মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত ওই গবেষণায় দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৪৪ জেলার করোনা সেবাগ্রহীতাদের টেলিফোন জরিপ এবং ৪৩ জেলার ১০৫ কেন্দ্রে টিকাগ্রহীতাদের অভিজ্ঞতা শোনা হয়।
এদিকে, করোনার টিকা কেনা ও বিতরণে খরচের ক্ষেত্রে সরকারি ও টিআইবির হিসাবে দেখা দিয়েছে গরমিল। টাকার হিসাবে এই ফারাক প্রায় ২৩ হাজার কোটি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত মার্চে বলেছিলেন, টিকা কেনা ও বিতরণে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তবে টিআইবির গবেষণা বলছে, এই খরচ সর্বোচ্চ ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি নয়।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'করোনা মোকাবিলায় মোটাদাগে বাংলাদেশ সফল হলেও সুশাসনের আঙ্গিকে বিশেষত অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। দুর্গম স্থানে বসবাসরত জনগোষ্ঠী, বয়স্ক নাগরিক, সুবিধাবঞ্চিত ও ভাসমান মানুষের দোরগোড়ায় গিয়ে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবে এ লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম দেখা যায়নি। করোনা মোকাবিলায় খরচের ব্যাপারে কিছু তথ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোটাদাগে উল্লেখ করলেও সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।'
গবেষণার তথ্য তুলে ধরে রিসার্চ ফেলো জুলকারনাইন বলেন, হাসপাতাল থেকে অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার ২২.২ শতাংশ সেবাগ্রহীতার মধ্যে ৬১ শতাংশের সেবা পেতে দেরি হয়েছে। একই সঙ্গে ৩৪.১ শতাংশ রোগী হাসপাতালের করোনা ইউনিটে স্বাস্থ্যকর্মীদের অনুপস্থিতি ও দায়িত্ব পালনে অবহেলা, দুর্ব্যবহার ও অসহযোগিতার শিকার হয়েছেন। সেবা সম্পর্কিত তথ্য দেওয়া হয়নি ২৪.৪ শতাংশ রোগীকে। অতিরিক্ত ফি আদায় ও দালালের কাছে হয়রানির শিকার হয়েছেন ১২.২ শতাংশ রোগী। নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ সেবাগ্রহীতা অনিয়ম ও দুর্নীতির মুখে পড়েন। এ ছাড়া ২৬.১ শতাংশ সেবাগ্রহীতা নমুনা দিতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬৮.৬ শতাংশ নমুনা পরীক্ষাগারে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। নমুনা পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর ফিরে এসেছেন ১৭.৩ শতাংশ মানুষ। পরীক্ষাগারে দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন ১৬.৭ শতাংশ এবং নমুনা দিতে একাধিকবার কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হয়েছেন ১০.৩ শতাংশ মানুষ। নমুনা পরীক্ষার ফল পেতে গড়ে আড়াই দিন করে সময় লেগেছে। সর্বোচ্চ সময় লেগেছে ৯ দিন। পরীক্ষাগারের স্বল্পতা, অতিরিক্ত ভিড়, নমুনা দিতে জটিলতা, অতিরিক্ত খরচ, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে নমুনা পরীক্ষায় নিরুৎসাহিত করেছে।