দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম একটি দেশ শ্রীলংকা। ভারত মহাসাগরে অবস্থিত দেশটির সুনাম রয়েছে তার নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলংকায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত জনসংখ্যা রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৯৯ শতাংশই অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। ১৯৪৮ সালের স্বাধীনতার পর পরই দেশটি বিনামূল্যে সর্বজনীন শিক্ষার প্রচলন করে, যা শিক্ষার হার বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। একদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অন্যদিকে শ্রীলংকার জনগণের আতিথেয়তা দ্বীপটিকে পৃথিবীর অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করেছে, যার সুফল পড়েছে দেশটির জাতীয় আয়ে। জাতীয় আয়ের ভিত্তিতে দক্ষিণ এশিয়ায় মালদ্বীপের পরই শ্রীলংকার অবস্থান। ব্যষ্টিক অর্থনীতির অন্যান্য মাপকাঠিতেও শ্রীলংকা ছিল তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে। যদিও ১৯৮৩ সালে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটি সম্ভাবনার সবটুকু কাজে লাগাতে পারেনি, ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধ শেষ হলে জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে উল্লম্ফন দেখা যায়, যা দেশটিকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করে।
তবে এ সুখস্মৃতি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি শ্রীলংকার জন্য। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনায় সম্প্রতি এক নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে দেশজুড়ে। উচ্চমধ্যম আয়ের দেশের তকমা হারিয়ে শ্রীলংকার অবনমন হয়েছে নিম্নমধ্যম আয়ের সারিতে। শুধু তা-ই নয়, দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ এত তলানিতে ঠেকেছে যে জীবনধারণের জন্য অতি প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা যেমন জ্বালানি, খাদ্যদ্রব্য, এমনকি জীবনরক্ষাকারী ওষুধপত্রের আমদানি করতেও অপারগ দেশটি। প্রয়োজনীয় জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, কলকারখানার উৎপাদন কমে যাচ্ছে জ্বালানিস্বল্পতায়। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে চলে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। শ্রীলংকা এরই মধ্যে বাংলাদেশ এবং ভারত থেকে ঋণ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু তা হালে পানি পায়নি। সম্প্রতি দেশটি আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে।