ভারতীয় গণতন্ত্রে পরিবারতন্ত্র নতুন কিছু নয়। বামপন্থী বা বিজেপির মতো দু-একটি দল বাদ দিলে সর্বত্রই পরিবারতন্ত্রেরই দাপট। তবে সেই পারিবারিক উত্তরাধিকার নিয়ে দ্বন্দ্বও কিন্তু ভারতীয় রাজনীতির পরম্পরা হয়ে উঠেছে। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর ঘনিষ্ঠজনেরা ইন্দিরা গান্ধীর বিরাগভাজন হন। আবার ইন্দিরা গান্ধীর ঘনিষ্ঠজনের অনেকেই তাঁর পুত্র রাজীবের আমলে চলে যান রাজনৈতিক বনবাসে। যেমন প্রণব মুখার্জি। ইন্দিরার আমলে নম্বর-টু প্রণবকে রাজীব ক্ষমতায় এসে দল থেকে বের করে দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য প্রণব ফিরে আসেন স্বমহিমায়। অন্য দলেও পরিবারতন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতার হাতবদলে ঝাঁকুনি কিন্তু ভালোই অনুভূত হয়। উত্তর প্রদেশে মুলায়ম সিং যাদব থেকে তাঁর ছেলে অখিলেশের ক্ষমতার ব্যাটন হাতবদলে যেমন অনুভূত হয়েছে ঝাঁকুনি, ঠিক তেমনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে অভিষেকের উত্থানে। ম-এ মুলায়ম, মমতাও। ঠিক তেমনি অ-এ অখিলেশ, অভিষেকও। তাই পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলে যে ঝাঁকুনি শুরু হয়েছে, এটা নতুন কিছু নয়। পাওয়ার সেন্টার বদলাচ্ছে। তাই নবীন ও প্রবীণের সংঘাত অবশ্যম্ভাবী।
বিজেপি যতই কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্র নিয়ে কথা বলুক, ভারতীয় উপমহাদেশের এটাই পরম্পরা। ভারতের মানচিত্রের দিকে তাকান। কাশ্মীরে ফারুক আবদুল্লাহর ছেলে ওমর আবদুল্লাহ থেকে শুরু করে দক্ষিণে অন্ধ্র প্রদেশে ওয়াইএসআর রেড্ডির ছেলে জগমোহন, পশ্চিমে বালাসাহেব ঠাকরের ভাইপো উদ্ভব ঠাকরে থেকে পূর্বে মমতার ভাইপো অভিষেক—ছবিটা একই। তালিকা বিশাল। আঞ্চলিক দলগুলোর প্রায় সব কটিতেই দাপিয়ে চলছে পরিবারতন্ত্র। ৩১ জন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ৯ জনই হয়েছেন পারিবারিক রাজনীতি থেকে। বিরোধী দলনেতাদের মধ্যে ১১ জন এসেছেন পারিবারিক উত্তরাধিকার সূত্রে। তামিলনাডুতে জয়ললিতার মৃত্যুর পর তাঁর দল এআইএডিএমকে চরম সংকটে পড়েছিল তাঁর কোনো উত্তরাধিকার না থাকায়। বান্ধবী শশীকলাকে বসিয়েও দল বা সরকারের হাল ফেরাতে ব্যর্থ হয়ে অস্তিত্বসংকটে ভুগছে এআইএডিএমকে।