রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জনগণ সেই পাকিস্তানি আমল থেকেই একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় ঘটেছে মুক্তিযুদ্ধ—স্বাধীনতার জন্য সর্বাত্মক সংগ্রাম। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সাংবিধানিক পথে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু হয়। তবে সে কাজ সহজ ছিল না। দেখা যাচ্ছে, আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে একটি জাতি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে স্বাধীনতাও অর্জন করতে সক্ষম, কিন্তু প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সচল করে সরকার পরিচালনাকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি প্রদান, সরকারের জবাবদিহি ও প্রশাসনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা তত সহজ নয়। আসলে আন্দোলনের গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তা সম্পাদনও সম্ভব নয়। তার জন্য সামাজিক প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়।
স্বাধীনতাযুদ্ধের অভিজ্ঞতা এবং সেকালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনেকের মধ্যকার বাম বিপ্লবী চেতনাকে প্রাধান্যে নিয়ে এসেছিল। তারা যে স্বাধীন বাংলাদেশে ধ্রুপদি ধারায় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করতে চেয়েছিল, তাকে ইতিহাস ভুল আখ্যায়িত করলেও তৎকালীন বাস্তবতায় তাদের আকাঙ্ক্ষাকে সম্পূর্ণ নাকচ করা যায় না। কিন্তু ক্ষমতাসীন রাজনীতির মূলধারা ১৯৭০-এর নির্বাচনী অঙ্গীকারকে গুরুত্ব দিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রের পথেই রাষ্ট্রকে চালনা করতে চেয়েছিল আর নবীনদের বড় এক অংশের বিপ্লবী চেতনা তাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানাতে কসুর করেনি। আরেক দলের উচ্চাভিলাষ অবশ্য রাজনৈতিক চেতনা হারিয়ে ব্যক্তিগত প্রাপ্তি পূরণের দিকে ঝুঁকেছিল। এতে সমাজে আকস্মিকভাবে উপপ্লবের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এ অস্থিতিশীল ঘোলাটে পরিস্থিতিকে আবার পরাজিত শক্তি নিজেদের রাজনৈতিক-সামাজিক অবস্থান গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছে। এ রকম অবস্থায় পঁচাত্তরে প্রতিক্রিয়ার আঘাত পুরো পরিস্থিতিকে তাদেরই অনুকূলে নিয়ে যায়।