আমার এই প্রশ্নের জবাব শুধু এই দুই তরুণই নয়, পরিচিতদের যারা ছেলেমেয়েকে বিদেশ পাঠানোর স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষার বীজতলা হিসেবে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াচ্ছেন তারাও দিতে পারেননি। কেন সন্তানকে বিদেশ পাচার করে দেওয়া? আসলে শুধু সন্তান নয়, নিজেদেরই পাচার হয়ে যাওয়ার ‘সাজগোজ’এটা। সন্তানরা যথাযথ ‘জলপানি’ নিয়ে বিদেশ পড়তে যাবে, এটা শুধু কোনও একক পরিবারের গৌরব নয়, রাষ্ট্রেরও। কিন্তু ঘুষ, দুর্নীতির সম্পদ, টাকা পাচারের পাশাপাশি, তারা সন্তানদেরও পাচারের ‘বস্তু’ করে তুলেছেন।
আত্মীয়-পরিজন মহলেও কোণঠাসা হয়ে যাওয়ার অবস্থা। সহকর্মীদের কাছে তো পাত্তা পাওয়ার অবস্থানে নেই। কারও পুরো পরিবার বিভুঁইয়ে। কারও ছেলে –মেয়ে। যাদের সন্তানরা দেশে আছেন তারা ইংরেজ মাধ্যমে পড়ছেন। বাংলার সঙ্গে তাদের কোনও যোগাযোগ নেই। ইংরেজি মাধ্যমে সন্তানরা পড়বে, এটা সামাজিক ‘গুনাহ’হবে কেন? এ নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমারও কোনও রক্ষণশীল অবস্থান নেই। সমস্যা হলো ইংরেজি মাধ্যমে পড়বে বলে, সন্তানের সঙ্গে মাতৃভাষার বিচ্ছেদ ঘটাবো কেন? বাংলা, বাংলার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ শুধু বিদ্যায়তনের শিক্ষা নয়। মূলত এই শিক্ষাটি পারিবারিক। এমন অনেক শিক্ষক, সমাজ সংস্কারকের ভূমিকায় থাকা ব্যক্তিদের জানি, যারা আমার সন্তানকে বাংলাদেশ, জয় বাংলা, বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা জাগরণের জন্যে ঘাম ঝরাচ্ছেন। অথচ তাদের পারিবারিক কথোপকথনের ভাষা–বাংলা নয়। দেশের স্বাধীনতা, বিজয় নিয়েও তাদের সন্তানদের মধ্যে কোনও দরদ নেই।