১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লব হয়েছিল। এই বিপ্লবের ফলে ফরাসি দেশ তথা ফ্রান্স রাজতন্ত্রের শাসন থেকে মুক্তি পায়। ফ্রান্সে এ বিপ্লবের ফলে বুর্জোয়া বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি হয়। তবে ১৭৮৯-এর পরেও ফ্রান্সে অনেক রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটে। বিপ্লবের কাছাকাছি সময়ে ফ্রান্সে খাদ্যের দাবিতে ভুখা মিছিল হয়। ক্ষুধার্ত জনতা রুটির দাবিতে মিছিল করছিল। তাদের মিছিলের স্লোগান শুনে রানি মেরি আঁতোয়া জিজ্ঞাসা করেছিলেন, লোকজন কী দাবি করছে? তাকে জানানো হয়েছিল, লোকজন রুটি দাবি করছে। মেরি আঁতোয়া লোকজনের দাবির কথা শুনে বললেন, ওরা রুটি খেতে পারছে না তো কী হয়েছে? তারা রুটির বদলে কেক তো খেতে পারে। এই গল্পটি সজ্জনেরা প্রায়ই বলে থাকেন যখন খাদ্যের অভাবে জনগণ বিক্ষোভ করে।
সামন্ততান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসকশ্রেণির একটি অত্যন্ত আপত্তিকর বৈশিষ্ট্য হলো জনগণের দুঃখ-দুর্দশায় হৃদয়হীনভাবে পরিহাস করা। শাসকশ্রেণি ভোগবিলাসী জীবনে অভ্যস্ত থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের বিলাসিতা কদর্য রূপে প্রকাশ পায়। ইথিওপিয়ার সম্রাট হাইলে সেলাসির বাড়াবাড়ি রকমের বিলাসী অভ্যাস ইথিওপীয়দের বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। হাইলে সেলাসি তার পোষা কুকুরকে সোনার থালায় মাংস খেতে দিতেন। কল্পনা করা যায় কিভাবে একজন সম্রাট ঐশ্বর্যবিলাসের জীবনযাপন করে, যখন তার প্রজারা খাবার না পেয়ে হাড্ডিসার প্রায় কংকালে পরিণত হয়!
কোনো গণতান্ত্রিক দেশে শাসকশ্রেণির কোনো কোনো সদস্যের কাছ থেকে এ ধরনের হৃদয়বিদারক আচরণ আশা করে না। সত্যিকারের গণতান্ত্রিক দেশে কোনো দায়িত্বশীল মন্ত্রী অথবা কর্মকর্তা উৎকট পরিহাস করার সাহস পায় না। তারা খুব ভালো করেই জানে তাদের আপত্তিকর বক্তব্য স্বাধীন সংবাদপত্র ফাঁস করে দেবে। মিডিয়াতে যদি কারও দায়িত্বহীন মন্তব্য প্রকাশ পায়, তাহলে তার গণবিচ্ছিন্নতা প্রকট হয়ে ওঠে।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যারা দেশ পরিচালনা করেন, তাদের আচার-আচরণ এবং বোল-চাল বৃহত্তর মিডিয়া জনগণের নজরে নিয়ে আসে। ফলে তাদের পক্ষে পরবর্তী নির্বাচনে ভোট পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো স্বাধীন মিডিয়া। স্বাধীন মিডিয়া ছাড়া কোনো রকমের গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না। যেসব শাসক স্বাধীন মিডিয়ার চলার পথকে কণ্টকাকীর্ণ করে তোলে, তারা আর যাই হোক, গণতান্ত্রিক মন-মানসিকতাসম্পন্ন নন।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল থাকলে জনগণ স্বস্তিবোধ করে। তারা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকেও রেহাই পায়। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যখন লাগামহীনভাবে বাড়তে শুরু করে তখন পরিচিত কলাকৌশল প্রয়োগ করে সাধারণ মানুষ তাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়। এই পরিবর্তন আর যাই হোক সুখকর নয়।