ক্ষমতার পালাবদল হয়, সমাজ বদলায় না

সমকাল মযহারুল ইসলাম বাবলা প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০২২, ১১:৫৬

জহির রায়হানের 'জীবন থেকে নেয়া' ছবিটি আমাদের জাতীয়তাবাদী ও স্বাধিকার আন্দোলনের অগ্নিগর্ভ উত্তাল সময়ের এক প্রামাণ্য দলিল বললে ভুল হবে না। সময়োচিত চলচ্চিত্রটি জাতির ওপর এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে অপ্রতিরোধ্য প্রভাব ফেলেছিল- সেটা অস্বীকার করা যাবে না। চলচ্চিত্রটি ওই সময়ে যথার্থই সাহসিকতার সঙ্গে নির্মাণ করেছিলেন জহির রায়হান। এই ছবির ছাড়পত্র পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। মনে পড়ে, জহির রায়হান ঘোষণা দিয়েছিলেন- ছাড়পত্র না পেলে ছবিটি ছবিঘরের পরিবর্তে দেশজুড়ে প্রদর্শন করবেন। তার ওই ঘোষণা এবং সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে প্রতিবাদের মুখে ছবিটির ছাড়পত্র দিতে বাধ্য হয় সেন্সর বোর্ড কর্তৃপক্ষ।


 সেই সময়কার আন্দোলন-সংগ্রামের প্রামাণ্য দৃশ্যাবলি ছবিতে নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছিল। ছবিতে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় ছিল 'চাবির গোছা', যা ক্ষমতার প্রতীক হিসেবেই গণ্য করা যায়। চাবির গোছা হস্তান্তর ক্ষমতার হস্তান্তরের প্রতীকী রূপ। চাবির গোছার হাতবদল ক্ষমতারই হাতবদল। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে। সামষ্টিক মানুষের কাছে যে ক্ষমতা পৌঁছাতে পারবে না- তা কি জহির রায়হান আগাম আঁচ করতে পেরেছিলেন? একজন ঔদ্ধত্য ও পিতৃতান্ত্রিকতার প্রতীক নারীর স্বেচ্ছাচারী কর্তৃত্বে পরিবারের প্রতিটি সদস্য তটস্থ। কিন্তু তার একক কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে কেউ মুখে টুঁ শব্দটি করতে সাহস পায় না। হঠাৎ পরিবারে তার ভাইয়ের বউয়ের আগমন ঘটে। তার আগমনে পরিবারটিতে বদলের হাওয়া লাগে। নানা ঘটনাক্রমে পরিণতি দাঁড়ায় চাবির গোছা হস্তান্তর। ভাইয়ের বউটি আপাত নিরীহ, কিন্তু চাবির গোছা হাতে পেয়ে খুশিতে দিশেহারা হয়ে পড়ে। এমনকি নিজ বোনের সঙ্গে সন্তান বিনিময়ে রুদ্রমূর্তি ধারণ করতে বিলম্ব করে না। চাবির গোছা পক্ষান্তরে কর্তৃত্বের 'ক্ষমতা'। সেটি পেয়ে নিরীহ মানুষটির মধ্যেও পিতৃতান্ত্রিকতার নানা উপাদান ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।


একটি দেশ-জাতিকে একটি পরিবারের ভেতর দিয়ে প্রতীকী হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন জহির রায়হান। আমরা পাকিস্তানি সামরিক, বেসামরিক আমলাতন্ত্রের অধীনে গণতান্ত্রিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক- সর্বক্ষেত্রেই অধিকারবঞ্চিত ছিলাম। জহির রায়হান পুরো বিষয়গুলো যেমন প্রামাণ্য চিত্রকল্পে তুলে আনেন, তেমনি রূপক বা প্রতীকী হিসেবে চলচ্চিত্রে তুলে ধরেছেন নানা দৃশ্য। তিনি শহীদ দিবসের বাস্তব ফুটেজ ধারণ করে চলচ্চিত্রে সংযুক্ত করেন। মিছিল, সমাবেশ, পুলিশের গুলিবর্ষণ থেকে স্বাধিকার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ওই সময়কার ঘটনাগুলোকে প্রামাণ্য হিসেবে জাতির কাছে তুলে ধরেন, যা ওই সময়ে অন্য কোনো চলচ্চিত্রে দেখা যায়নি। জহির রায়হান রাজনীতি-সচেতন ছিলেন; সেই সঙ্গে সাহসীও। আমাদের মুক্তিসংগ্রামে অবিচ্ছেদ্য ছিলেন বলেই সাংস্কৃতিকভাবে অসামান্য দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন।


আগে ২১ ফেব্রুয়ারিতে আমরা কাকভোরে প্রভাতফেরিতে খালি পায়ে হাতে ফুল, বুকে কালো ব্যাজ পরে আজিমপুর কবরস্থানে যেতাম এবং সেখান থেকে শহীদ মিনারে। তখন শহীদ মিনার কিংবা শহীদদের কবরস্থানে আগে বা পরে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। অগণিত মানুষের পদচারণায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার উদ্ভব কখনও ঘটেনি। শোক দিবসে নীরব শোকাবহ থাকত দিনব্যাপী আশপাশ। মনে পড়ে, একবার একুশের প্রভাতফেরিতে আজিমপুর কবরস্থানে ঢুকেই দেখতে পাই নায়ক রাজ্জাককে প্রচুর মানুষ পেছন থেকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। রাজ্জাকের পরনে হালকা হলুদ পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা ও খালি পা। অতি উৎসাহীদের চাপে তার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। জহির রায়হান গলায় আলো মাপার যন্ত্র ঝুলিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছটফট করছেন। কয়েকজন ব্যক্তি চলচ্চিত্রের ইউনিটের লোকদের উদ্দেশ করে বলেন, 'শোক দিবসে তারা এসেছেন সিনেমার শুটিং করতে; ফালতু যত্তসব!' কিন্তু তারা কি জানতেন, এই সিনেমাই আমাদের স্বাধীনতার অভিমুখের অভিযাত্রায় পুরো জাতিকে শানিত করবে? উৎসুক কৌতূহলী মানুষের জটলায় ছবির শুটিং ব্যাহত হয়। কিন্তু উদ্যমী জহির রায়হান দমে যাওয়ার পাত্র নন। কিছু শুভার্থী ও ছাত্রনেতার সহায়তায় বহু কষ্টে শুটিং সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন সেদিন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us