একটি সংবাদে চোখ আটকে গেল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কথা বলতে চাইছেন। কিন্তু সৌদি আরবের যুবরাজ কার্যত ছায়া বাদশাহ মোহাম্মদ বিন সালমান ও আরব আমিরাতের যুবরাজ জায়েদ আল নাহিয়ান এড়িয়ে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি থামাতে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা সহজ করার কথা ভাবছে। এই দুই দেশের পক্ষ থেকে তেমন সাড়া মেলেনি। এ রকম বেকায়দায় যুক্তরাষ্ট্র নিকট অতীতে পড়েছে বলে জানা নেই। যুক্তরাষ্ট্র কথা বলতে চাইছে আর বিভিন্ন দেশের শাসকেরা এড়িয়ে যাচ্ছেন, এসব সচরাচর দেখা যায় না। বোধ করি যুক্তরাষ্ট্রের দুর্দশা অনুধাবন করেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও পিছটান দিয়েছেন। ন্যাটোতে যোগ দিতে চাইছেন না। দোনেৎস্ক ও লুহানভের স্বাধীনতা বা স্বায়ত্তশাসন নিয়ে আলোচনায় তিনি রাজি হয়েছেন। তিনি রাশিয়ার সঙ্গেও আলোচনার পথ খোলা রাখতে চাইছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দুর্দশা মূলত আফগানিস্তানে তালেবানদের হাতে কাবুল পতনের পর থেকেই শুরু। ১৯৯০ এর পর এক মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র একাই সারা বিশ্ব রীতিমতো নিয়ন্ত্রণ করেছে। সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে যখন-তখন বিভিন্ন দেশে হামলা করে সুবিধা নিয়েছে। এবারও ইউক্রেন সংকট উসকে নিয়ে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি কেবলমাত্র ইউরোপ নতুন করে ন্যাটোর সেনা মোতায়েন ও জার্মানির সামরিক বাজেট বৃদ্ধির ঘোষণা বাদে।
অথচ সরাসরি সামরিক সহায়তা ছাড়া সব ধরনের শক্তি নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের পাশে থাকার চেষ্টা করছে। পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে রাশিয়াকে তুলোধুণা করে দিচ্ছে। কোনো কোনো গণমাধ্যম রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জার্মানির নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গেও তুলনা করেছেন। পাল্টা জবাবে পুতিনও ইউক্রেনীয়দের নতুন নাৎসি বলে অভিহিত করেছেন। সন্দেহ নেই পুতিন দখলদারের ভূমিকায় উপস্থিত হয়েছেন। একটি স্বাধীন দেশে হামলা করেছেন। পুতিনের আগ্রাসী মনোভাব ও পশ্চিমা গণমাধ্যমের লাগাতার প্রচারণার পরও সারা বিশ্বে এই হামলা নিয়ে খুব বেশি হেলেদোল নেই। পশ্চিমা গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে। পুতিনের পুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে। কিন্তু এসব বিক্ষোভ ইউরোপের দেশগুলোতেই সীমাবদ্ধ ছিল। ইউরোপীয়রা মনেপ্রাণে চায় দ্রুত এই যুদ্ধ বন্ধ হোক। এই যুদ্ধের বোঝা তাদেরই বহন করতে হবে। ইতিমধ্যেই ইউরোপে ইউক্রেনীয় উদ্বাস্তুর ঢল শুরু হয়েছে।
পশ্চিমা গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মার্কিনপন্থী নির্বোধ কিছু অ্যাকটিভিস্ট ছাড়া রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন খুব বেশি যুদ্ধবিরোধী মনোভাব গড়ে তুলতে পারেনি। আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা বা এশিয়ার দেশগুলোতে যুদ্ধবিরোধী বড় ধরনের কোনো বিক্ষোভ হয়েছে বলে নজরে আসেনি। বরং বিস্ময়কর হলেও সত্য যে এ নিয়ে বিশ্ব নাগরিকদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি লক্ষ্য করা গেছে। এটা খুবই ভয়াবহ এক পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়। মানুষ যুদ্ধ ও আগ্রাসনকে প্রকাশ্যেই সমর্থন করছে। দেখা যাচ্ছে, ডানপন্থী চিন্তার প্রসারের কারণে এক ধরনের ছদ্ম ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটছে। বিস্ময়করভাবে ইউক্রেন ইস্যুতে কর্তৃত্ববাদী, বামপন্থী, ইসলামপন্থীরা মার্কিন বিরোধী মনোভাবের কারণে এক জায়গায় মিলিত হয়েছে।