গল্প-কবিতা-উপন্যাসে নারীকে কখনো মা, কখনো বা দেবীরূপে কল্পনা করা হলেও বাঙালির আবহমানকালের প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতি কতটা নারীবান্ধব? নারী কি নারী, নাকি মানুষ? বাঙালি সমাজে নারীরা যুগ যুগ ধরে সামাজিক কুসংস্কারের প্রভাব ও শিক্ষার অভাবে অনগ্রসর। তাদের সামাজিক ভূমিকা সন্তান জন্মদান, সন্তানদের লালন-পালন থেকে শুরু করে পতিগুরুর সেবা করা ও গৃহকর্মের মধ্যেই তাদের জীবন বৃত্তাবদ্ধ। এ-কারণেই নারী মানেই রমণী। অর্থাৎ রমণ বা পতি-পুরুষের সেবাই তার মূল কাজ।
সামাজিক এরূপ ধারণার ফলে দীর্ঘদিন ধরে নারীরা রাষ্ট্রের আইন, সামাজিক বিধিনিষেধ ও অর্থনৈতিক বিবেচনায় বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ ও সতীত্ব ধারণার কবলে পড়ে তারা আরও বেশি শৃঙ্খলিত হয়। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেনের কথায়, ‘উড়তে শেখার আগেই পিঞ্জিরাবদ্ধ এই নারীদের ডানা কেটে দেওয়া হয় এবং তারপর সামাজিক রীতিনীতির জালে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখা হয় তাদের। ...নারীর দাসত্বের প্রধান কারণ, পুরুষশাসিত সমাজ ধর্মের নাম করে নারীর দাসত্বকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ এবং অলৌকিক মহিমা দিয়েছে।’
তবে, উনিশ শতকের প্রথমার্ধে নারীদের অধিকার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। বিভিন্ন ধরনের আলাপ-আলোচনা, উদ্যোগ ও আন্দোলনের মূল তাগিদ ছিল নারীদের সামাজিক মর্যাদা ও জীবনের বিকাশকে ত্বরান্বিত করা। এভাবে বিংশ শতাব্দীকে বর্ণনা করা হয় তাদের আত্মপ্রকাশের যুগ হিসাবে। একবিংশ শতাব্দীতে এসে বাঙালি নারী অনেকক্ষেত্রেই এগিয়েছে। এই অগ্রসরতার অন্যতম নির্দেশক হলো নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং এই অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের মূল চাবিকাঠি হলো শিক্ষা।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করিবেন।’ একথা অস্বীকার করার কোনো সঙ্গত যুক্তি নেই যে, বাঙালি নারীরা শিক্ষায় এখন অনেকটাই এগিয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নারী-পুরুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হলেও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নারীরা এখনো অনেকটা পিছিয়ে।