বাংলাদেশের ইতিহাসে ফেব্রুয়ারির একুশ শুধু একটি মাস-তারিখ নয়; নয় শুধু একটি দিনমাত্র। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বিশ বছর আগে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির দিনটি নিজেই একটি ইতিহাস, বাঙালি-জীবনে রক্ত-রাঙানো একটি জেগে ওঠার দিন, অনন্য একটি অর্জনের দিন, মায়ের মুখের ভাষাকে কেড়ে নেওয়ার প্রয়াসী হায়েনাদের গ্রাস থেকে বাংলা ভাষাকে রক্ষা করার জন্য বাঙালি জাতির প্রতিজ্ঞাবদ্ধ একটি দিন। এমন একটি দিন, যে দিনটি আন্তর্জাতিকতায় রূপান্তরিত হয়ে বাংলাদেশের মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। আজ বিশ্বের সব দেশ এ দিনটিকে স্মরণ করে, বরণ করে, উদ্যাপন করে, আপন আপন ভাষাকে শ্রদ্ধা জানায়, মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্য প্রতি বছর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। তাই একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দিন।
অথচ প্রত্যুষে নগ্নপায়ে প্রভাতফেরির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপিত হওয়ার প্রচলিত রীতি পালটে মধ্যরাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মনে হয় সবাই আমাদের এ ঐতিহ্যটির কথা ভুলে গেছে, মুষ্টিমেয় কয়েকজন ঐতিহ্যদরদি মানুষ ছাড়া। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখিও তেমন হয় না; সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে আলোচনা হয় না। সয়ে গেছে সব। তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক-কলামিস্ট একেএম শাহনাওয়াজ এ ব্যাপারে বেশ সোচ্চার। তিনি একাধিকবার বিভিন্ন পত্রিকায় এ বিষয়ে লিখেছেন এবং জনমত সৃষ্টির চেষ্টাও করছেন। আমার মতো যারা ষাট-সত্তরের দশকে এবং এরশাদ-পূর্ব সময়ে কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে খালি পায়ে যোগ দিতাম প্রভাতফেরিতে, তারা প্রতিটি একুশে ফেব্রুয়ারিতে মন খারাপ করে চিন্তা করতে থাকি-ভবিষ্যতে অন্যান্য বাঙালি ঐতিহ্যও কি এভাবে ভূলুণ্ঠিত হতে থাকবে?