সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন হয়েছে। সমাজ ও সভ্যতার জন্য নতুন নতুন ধারণা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আইন ও বিচারব্যবস্থা। আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি দূর করা এবং সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। দুটি বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বসমাজ নিজেদের স্বার্থেই ১৯৪৮ সালে মানবাধিকারের সর্বজনীন সনদ তৈরি করেছে। এ সনদের ধারা ৭ ও ১০-এ প্রত্যেক মানুষের আইনের চোখে সমান হওয়ার ও নিরপেক্ষ বিচারলাভের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। তেমনি আমাদের সংবিধানে আইনের কাছে সমান আশ্রয়লাভের অধিকার শুধু অধিকারই নয়, মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচ্য। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী। ’ একইভাবে আইনের কাছে আশ্রয়লাভের বিষয়টি স্পষ্ট করেছে সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ।
আইন তৈরি করা হয় অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে। পৃথিবীর ইতিহাসে আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি ও ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচার বা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নজির অনেক। অপরাধের বিচারের জন্য আইনের প্রয়োগ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত রায় হওয়ার অনেক ধাপ আছে। এ ধাপগুলোর কোনো একটির দুর্বলতা ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এটা নির্ভর করে অপরাধের যথাযথ অনুসন্ধান থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণের সঠিক উপস্থাপনের ওপর। এমনকি আইনের লোকজনের উদ্দেশ্য, আন্তরিকতা ও দক্ষতাও এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তাই আইনের ফাঁক গলে চিহ্নিত অপরাধীদের নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার নজির কম নয়। যে জন্য ডি বালজাক বলেছিলেন, ‘আইন হলো এমন মাকড়সার জাল, যার ভেতর দিয়ে বড় মাছিগুলো খুব সহজেই চলে যেতে পারে এবং ছোটগুলো ধরা পড়ে যায়। ’