সয়াবিন তেল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, ডাল ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের একচেটিয়া কারবারের কথা আমরা জানি। কোন কোন ব্যবসায়ী ‘গ্রুপ’ এ ব্যবসাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে, তারা কেমন ধন-সম্পদের মালিক-এসব কথা প্রায়ই খবরের কাগজে ছাপা হয়।
কিছু তথ্যপ্রমাণ দিয়ে, কিছু আকারে-ইঙ্গিতে। আমদানি থেকে সরবরাহ ও বণ্টন সবটাতেই আধিপত্য কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপের। ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা করে অনেকে নানা ধরনের ব্যবসা-শিল্প, বাণিজ্য, হাসপাতাল, তৈরি পোশাক ইত্যাদি ব্যবসায় ঢুকেছেন। এদের কথা মোটামুটি জানা। এসব খাতে কত হাজার কোটি টাকা বিনিয়োজিত, সেই তথ্যও আমরা খবরের কাগজে পাই। অতএব এসব পুরোনো কথা।
কিন্তু যে খবরটি খুব বেশি চাউর হয়নি এখনো, তা হচ্ছে চালের বাজারে একচেটিয়া ব্যবসা। চালের আমদানি, ধান-চাল কেনা, চাল তৈরি করা, অভ্যন্তরীণ বাজারে তা বিক্রি-বণ্টন করার পুরো ব্যবসাটা যে আজ কয়েকজন বড় ব্যবসায়ীর হাতে বন্দি, এ খবরটি এখন আস্তে আস্তে জানাজানি হচ্ছে। জানাজানি হচ্ছে সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে। কেন বলা হচ্ছে ‘সব সম্ভবের দেশ’? বলা হচ্ছে, কারণ এখানে কোনো পরিস্থিতির দরকার হয় না, প্রেক্ষাপট লাগে না, চাহিদা-সরবরাহের বিচার-বিশ্লেষণের দরকার হয় না, মর্জি হলেই একশ্রেণির একচেটিয়া ব্যবসায়ী গ্রুপ পণ্যের দাম বাড়াতে পারে।
তবে সয়াবিন তেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদির মূল্যবৃদ্ধি এক কথা, আর চালের মূল্যবৃদ্ধি সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। অন্য খাদ্যপণ্যের ভোগ কমানো-বাড়ানো যায়। দুই কেজি চিনির স্থলে একটি পরিবার এক কেজি, দেড় কেজিতে চালাতে পারে। অসুবিধা হলেও বাড়ির গৃহিণী তা ‘ম্যানেজ’ করে নিতে পারেন। কিন্তু চালের ক্ষেত্রে কি তা পারা যায়? পারা যায়, কিন্তু তাতে দিনে দিনে কৃশকায় হয়ে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হতে হবে। চাল ছাড়া আমাদের চলার কোনো পথ নেই। গমে যাওয়া যায়।
কিন্তু এটাও খাদ্যশস্য। বস্তুত চাল, আটা-ময়দার দাম বৃদ্ধির ফলাফল সব পরিবারের জন্যই দুঃসংবাদ বয়ে আনে। অথচ এ মুহূর্তে তা-ই হচ্ছে। আমরা ফাল্গ–ন মাসে পড়েছি। খ্রিষ্টীয় ফেব্রুয়ারি মাস। সবে আমন ধান কৃষকের ঘরে তোলা শেষ হয়েছে। বাজারে ধান-চাল আছে। এদিকে কৃষকরা ক্ষেতে বোরো ধান লাগাচ্ছে, যার ফলন হবে জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে, এমনকি বৈশাখ মাসেও।