কিন্তু সমস্যা হলো, সেই নারী স্প্যানিশ ছাড়া অন্য কোনো ভাষা বোঝেন না৷ আবার আমার কাজিনের বাসায় কেউ স্প্যানিশ ভাষা বোঝেন না৷ ভাষার এই দূরত্ব নিয়েই চলছিল তাদের প্রতিদিনের কাজ৷ কীভাবে? আমার কাজিন মোবাইলে ইংরেজিতে তার কথা লিখতেন৷ তারপর গুগল ট্রান্সলেটরে সেটি স্প্যানিশে অনুবাদ করে দিতো৷ এভাবেই তাদের যোগাযোগ৷ জরুরি কাজ হয়তো চলছিল৷ কিন্তু তাতে তাদের মধ্যে কোনো কার্যকর যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি৷ কারণ গুগল ট্রান্সলেটর যে হাস্যকর সব অনুবাদ করে তার অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই সবারই কমবেশি আছে৷ আর গুগল ট্রান্সলেটরের দোষই বা দেই কেন, যুগ যুগ এক ভাষার সাহিত্য আরেক ভাষায় অনুদিত হচ্ছে; তাতে কি কখনো মূল সাহিত্যের রসটা পাওয়া যায়?
মূক ও বধিররা ইশারা ভাষায় কথা বলে বটে৷ কিন্তু মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ হয় ভাষায়৷ কে কোন ভাষায় কথা বলবেন, তা নির্ধারিত হয়; তিনি কোথায় জন্মেছেন, তার জাতীয়তা কী তার ওপর৷ আমরা কথায় কথায় বলি না- মাতৃভাষা৷ আসলে আমার মা যে ভাষায় কথা বলেন, আমি সে ভাষায়ই কথা বলবো৷ এটাই আমার মাতৃভাষা৷ বাংলাদেশে জন্ম নিলেও একজন চাকমা কিন্তু তার ভাষায় কথা বলতে শিখবে, বলবে৷ একটা কৌতুক বলি৷ সিলেটের এক লোক গেছে লন্ডনে৷ ফিরে এসে সবাইকে বলছে, কী কী দেখে এলো৷ তিনি বিস্ময়ের সঙ্গে বললেন, কী তাজ্জব, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও ফরফর করে ইংরেজি বলছে৷ এটা তার কাছে বিস্ময়কর লেগেছে, কারণ তিনি ইংরেজি জানেন না৷ আবার যুক্তরাজ্যের শিশুদের কাছে ইংরেজি তার মায়ের ভাষা৷ ভাষা কিন্তু জ্ঞান নয়, জ্ঞান অর্জনের একটি বাহন মাত্র৷ একটি ভাষা কাজ চালানোর মত করে শিখতে মাস ছয়েক লাগে৷ আবার সারাজীবন তপস্যা করেও অনেকে নিজের মায়ের ভাষার আসল রূপের দেখা পান না