‘…পাঠান রাজত্বে রাজভাষা ছিল পোস্ত আর মোগল আমলে ফারসি। মোগল পাঠানেরা বিদেশি হলেও এ দেশকেই জন্মভূমিরূপে গ্রহণ করেছিলেন এবং দেশের অবস্থা জানবার জন্য দেশীয় ভাষাকে যথেষ্ট উৎসাহ দিয়েছিলেন; বিশেষ করে বাংলাদেশে পাঠান রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় রামায়ণ ও মহাভারত সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়। তা ছাড়া ভাগবত এবং পুরাণাদিও রচিত হয়। এর আগে বাংলা ভাষা নিতান্ত অপুষ্ট ছিল এবং এ ভাষা জনসাধারণের ভাষা বলে পণ্ডিতদের কাছে অশ্রদ্ধেয় ছিল।
তখনকার পণ্ডিতেরা কৃত্রিম সংস্কৃত ভাষার আবরণে নিজেদের সুচিতা ও শ্রেষ্ঠতা রক্ষা করতেন। রাজসুলভ উদারতার সঙ্গে গৌড়ের পাঠান সুবাদারগণ পণ্ডিতদের বিরুদ্ধাচরণ অগ্রাহ্য করতে সাধারণ লোকের সুবিধার জন্য (এবং হয়তো সঙ্গে সঙ্গে নিজেদেরও গল্পপিপাসা নিবৃত্ত করার জন্য) এই সকল পুরোনো রামায়ণ মহাভারত রচনা করান। বলা বাহুল্য, দেশীয় কালচারের ধারা রক্ষা করবার পক্ষে এবং দেশবাসীর নৈতিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের আদর্শ অক্ষুণ্ন রাখার জন্য এই সব পুস্তকের তুলনা নাই। কতকটা এই কারণেই আজ ভারতবর্ষের সামান্যতম কৃষকেরাও এক একজন দার্শনিক বলে পাশ্চাত্য পণ্ডিতদের বিস্ময় উৎপাদন করেছে।