ভাষা আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির নেতা-কর্মীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা ছিল। ছবি: সংগৃহীতরাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময় কমিউনিস্ট পার্টির নেতা-কর্মীদের ওপর মুসলিম লীগ সরকার কঠোর দমন-পীড়ন চালালেও এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ভাষা আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের প্রভাবে বিশ্বের দেশে দেশে কমিউনিস্ট পার্টি ও কমিউনিস্ট আন্দোলন গড়ে ওঠে।
পরাধীন ভারতেও এর ঢেউ এসে পৌঁছায়। ১৯২০ সালের ১৭ অক্টোবর (তাসখন্দ শহরে) প্রথম ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়। সাতচল্লিশের দেশভাগের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ১৯৪৮ সালের ৬ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নবগঠিত পাকিস্তানে স্লোগান তোলা হয়, ‘ইয়ে আজাদি ঝুট হ্যায়, লাখো ইনসান ভুখা হ্যায়, সশস্ত্র সংগ্রাম গড়ে তুলে এই সরকার হটাও।’ মোট কথা ‘ভুয়া স্বাধীনতা’র বিরুদ্ধে ধর্মঘট, জঙ্গি মিছিল, সভা ও সশস্ত্র সংগ্রাম প্রভৃতির আহ্বান জানানো হয়। দলের এই ‘বাম-হঠকারী লাইন’ গ্রহণ করায় পাকিস্তান সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে।
পরে বাস্তবতা বিবেচনা করে দল পরিচালনার জন্য পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির কমিটিতে রদবদল আনা হয়। ‘বাম-হঠকারী লাইন’ পরিত্যাগ করে সুস্থিরভাবে দল পরিচালনার জন্য ১৯৫১ সালে মণি সিংহকে সাধারণ সম্পাদক; বারীণ দত্ত, নেপাল নাগ, সুখেন্দু দস্তিদার ও খোকা রায়কে সম্পাদকমণ্ডলী এবং শেখ রওশন আলী, শহীদুল্লা কায়সার ও শচীন বোসকে সদস্য করে ‘পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি’র নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
পাকিস্তান সরকারের দমন-পীড়নে ভাষা আন্দোলনের সময় পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির নেতা-কর্মীরা কোণঠাসা অবস্থার মধ্যেও বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে প্রত্যক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেন এবং ‘সকল ভাষার সমান অধিকারের’ প্রশ্নে অটল থাকেন। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চের ধর্মঘটকে পাকিস্তান সরকার এবং তাদের দোসররা কমিউনিস্টদের ‘উসকানি’ বলে অভিহিত করে। ১৯৪৮ সালের ১২ মার্চ দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ‘ধর্মঘটের পশ্চাতে কমিউনিস্টদের উস্কানি’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ করা হয়। ১৯৪৮ সালের ১২ মার্চ মুসলিম লীগের গুন্ডারা পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির কাপ্তান বাজার ও কোর্ট হাউস স্ট্রিটের অফিসে আক্রমণ চালায় এবং জিনিসপত্র তছনছ করে। ১৩ মার্চ রণেশ দাশগুপ্ত এবং ধরণী রায়কে গ্রেপ্তার করা হয়।